এ এম রিয়াজ কামাল হিরণ,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃবাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষরা নানা সংকট মোকাবেলা করছে। তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মাঠে ঐক্যবদ্ধ হলে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায় সম্ভব হবে। শ্রমিকদের অধিকার আদায় হবে। শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।তিনি আজ শ্রমিক ঐক্যের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরোধ, অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল’২০২৩ বাতিল, নতুন পে কমিশন গঠন, গার্মেন্টসসহ সকল শ্রেণিপেশার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও গ্রেফতারকৃত শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শ্রমিক ঐক্যের সভাপতি এ এ এম ফয়েজ হোসেন-এর সভাপতিত্বে ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান-এর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক ফোরামের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জামিল, বাংলাদেশ পরিরবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কবির আহমাদ, বাংলাদেশ অটোরিক্সা-অটোটেম্পু পরিরবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন শহিদ, ন্যাশনাল ওয়ার্কাস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জনি, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ রিক্সা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মুহিব্বুল্লাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ফেরদৌসী বেগম, বাংলাদেশ দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল মজিদ শিকদার, বাংলাদেশ প্রগতিশীল নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ টিএন্ডটি কর্মচারী আদর্শ ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি শামসুল আলম, নির্মাণ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ওসমাণ গনি, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হাশেম, বাংলাদেশ কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চাতাল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন, বাংলাদেশ দোকান কর্মচারী শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, ইসলামী ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ওমর আলী, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক রুনা আক্তার, শ্রমিক মজলিস নেতা নূর হোসেন প্রমুখ।অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান বলেন, শ্রমিকদের জীবন সুখকর নয়। যে শ্রমিক কোটি মানুষের জন্য কাপড় বুনে তার কাফনের কাপড়ের জন্য ভিক্ষা করতে হয়। যে শ্রমিক ঔষুধ তৈরি করে, সে রোগের সময় ঔষুধ পায় না। আজকের সমাজে শ্রমিকরা মানুষের মর্যাদা পায় না। তাদেরকে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ শ্রমিকরা সভ্যতার কারিগর। তাদের শ্রমে পৃথিবী সচল থাকে। শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা ও অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।তিনি বলেন, চারিদিকে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। এসব উন্নয়নে শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করা না গেলে উন্নয়নের সুফল পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর যে জাতি শ্রমিকদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করেনি তারা টিকে থাকতে পারেনি। অন্য শ্রেণিপেশার মানুষদের মতো শ্রমিকদের রেশন দিতে হবে। শ্রমিকদের এই দেশের মানুষ হিসাবে মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।তিনি আরও বলেন, নারী শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার পর মজুরি দেওয়া হয় না। এসব ধারা বন্ধ করতে হবে। নারী শ্রমিকদের শ্রম মজুরি প্রদান করতে হবে। চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের চাকরিতে পুর্নবহাল করতে হবে। গ্রেফতারকৃত সকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।সভাপতির বক্তব্যে এ এ এম ফয়েজ হোসেন বলেন, শ্রমিক ঐক্য ৬ দফা দাবি নিয়ে আজকে সমাবেশ আয়োজন করেছে। ৬টি দাবি যৌক্তিক। আজকে দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষরা সীমাহীন কষ্টে আছে। আমরা যখন দ্রব্যমূল্য কমাতে বলি, তখন আমাদের ওপর অত্যাচার নেমে আসে।তিনি আরও বলেন, যে সরকার শ্রমিকদের কাজ দিতে পারে না। শ্রমিকদের চিকিৎসা, আবাসন ও খাদ্যের যোগান দিতে পারে না, আমরা মনে করি তাদের ক্ষমতায় থাকার দরকার নেই। তিনি বলেন, শ্রমিকরা অনাহারে অর্ধাহারে কাজ করে। ফলে শ্রমিকদের বুদ্ধি লোপ পায়। বুদ্ধি লোপ পেলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি হতে পারে না। শ্রমিকদের অংশগ্রহণে যে উৎপাদন হয়, আমরা তার মহার্ঘভাতা চেয়েছি। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি।তিনি আরও বলেন, শ্রমিক ঐক্য আজকের ৬ দফা দাবি নিয়ে আগামী দিনে আরও অগ্রসর হবে। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য শ্রমিক ঐক্য বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।সমাবেশে বক্তারা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম, কৃষিজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হাসান রাজুর মুক্তি দাবি করেন।