আহম্মেদ হাসান, কাজীপুর উপজেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জঃ
আব্দুল মজিদ (কাজিপুর থেকে) সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের মাজনাবাড়ি গ্রামে সুদের টাকা হাতিয়ে নিতেই ৩ বন্ধু মিলে সুদকারবারী আফাজ উদ্দিন হুদা (৬৬)কে হত্যার পর লাশ ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে দেয়। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর)
সকালে পিবিআইয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো: রেজাউল করিম এ তথ্য জানান।
এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৭ এপ্রিল কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের মাজনাবাড়ি গ্রামের আফাজ উদ্দিন হুদা (৬৬) নিখোঁজ হয়। স্বজনরা তাকে অনেক খোঁজাখুজি করেও সন্ধান পায় না। ৯ এপ্রিল ওই গ্রামের একটি ভূট্টা ক্ষেত থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১১ এপ্রিল তার ভাতিজা মো: ওয়াজেদ আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে কাজিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু থানা পুলিশের তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বাদীর আবেদনে মামলাটি পিবিআই এ স্থানান্তর করে আদালত।
এরপর সিরাজগঞ্জ পিবিআই পুলিশ গোপন সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহজনক ভাবে মাজনাবাড়ি গ্রামের মোঃ বিপুল মিয়া (১৮), মোঃ শাহিন মিয়া (১৯) ও সরিষাবাড়ি এলাকার মোঃ মোমিনুল ইসলামকে (২২) বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। এরপর তারা সকলেই আদালতে ১৬৪ ধারায় এ হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তিনি আরও বলেন, অবিবাহিত আফাজ উদ্দিন হুদার নির্দিষ্ট কোন থাকার জায়গা ছিল না। সে অধিকাংশ সময় তার বাড়ির পাশের মনসুর নগর বুদ্ধি প্রতিবন্ধি স্কুলের একটি কক্ষে একাই বসবাস করতেন ও নিজেই রান্না করে খেতেন। তিনি পেশায় সুদের কারবারী ছিলেন। গ্রামের লোকজনের কাছে সুদের উপর টাকা লাগাতেন এবং স্থানীয় নতুন বাজারে বসে নিয়মিত লাভের টাকা আদায় করতেন। তার সুদের উপর টাকা লাগানোর হিসেব রাখার জন্য তার কাছে সার্বক্ষণিক একটি ডাইরী রাখতেন। গ্রামের লোকজনের কাছে লাখ লাখ টাকা সুদের উপরে লাগানোই ছিল তার পেশা। ফলে তার কাছে সব সময় ২/৩ লক্ষ টাকা থাকতো। আসামী বিপুল মিয়া ওরফে বিপ্লবের সাথে হুদার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় মাঝেমধ্যে হুদা আসামী বিপুলের বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন ও তার রুমে বসে সুদের টাকার হিসেব করতেন। এতে আসামী বিপুল হুদার টাকার লোভে পড়ে যায়। ফলে অন্য আসামীদের নিয়ে সে ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্ব হুদাকে হত্যা করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৭ এপ্রিল রাতে আসামীরা হুদা বাড়ি ফেরার সময় তার পথরোধ করে তাকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার পর হুদার কাছে থাকা নগদ ৮৮ হাজার টাকা ও হিসাবের ডায়রি ছিনিয়ে নিয়ে হুদার গলায় গামছা পেচিয়ে সড়কের পাশের একটি ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এ মামলার বাদী মো: ওয়াজেদ আলী এ সময় আসামীদের দৃষ্টানমূলক শাস্তির দাবী করেন।