ভিক্টর বিশ্বাস চিতা, স্টাফ রিপোর্টারঃ

খোকসা উপজেলার ক্ষুরা রোগে খামারিদের শতাধিক গরু মারা গেছে। যার ক্ষতির পরিমান দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে খামারি-কৃষক ও পল্লী পশু চিকিৎসকরা দাবি করছেন ।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খোকসা উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৬৬টি গাভী গরু ও ষাঁড় মোটাতাজা করার খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় ৩২ হাজার ৯০ টি দুধ দেওয়ার উপযোগী গাভী ও ১২ হাজার ৯৪৬টি মোটা তাজা করনের ষাঁড় গরু পালন করা হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগী খামারী-কৃষক ও পল্লী পশু চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাস দু’য়েক আগে উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী আমবাড়িয়া, জয়ন্তী হাজারা ও গোপগ্রাম ইউনিয়নের গরুর খামার গুলোতে গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ (মুখ ও পায়ে ঘা) দেখা দেয়। আক্রান্ত গরু গুলো খাওয়া বন্ধ করে দেয়। রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার ৭০ শতাংশ গরু ক্ষুরা রোগে অক্রান্ত হয়েছে। গরুর খামার গুলোতে নতুন করে লাম্পি স্কীন ডিজিজ (এলএসডি) নামের রোগের আক্রমন যোগ হয়েছে। এসব রোগে শুধুমাত্র জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের উত্তর শ্যামপুর, ঝালুকাদহ, ধুসুন্ডু ফুলবাড়ি গ্রামে বহু গরু মারা গেছে। এ ছাড়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরু মরা যাওয়া খবর পাওয়া যাচ্ছে।

উত্তর শ্যামপুর গ্রামের আশা রাণী বিশ্বাসের গোয়ালে দুটি গাভী গরুসহ ৫ টি গরু ছিল। এক মাসে তার খামারে ক্ষুরা রোগে দুটি গাভীসহ ৪টি গরু মারা গেছে। এ গৃহীনির স্বামী নিশীকান্ত বিশ্বাস মাত্র দুই বিঘা কৃষি জমির মালিক। বড় ছেলে সাগর বিশ্বাস খোকসা সরকারী ডিগ্রী কলেজের বিএ (সম্মান) ও ছোট ছেলে সৈকত বিশ্বাস শোমসপুুর আবু তালেব ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। দুই সহদরের কলেজে পড়ার খরচসহ ৫ জনের সংসার চলত দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে। এছাড়া উত্তর শ্যামপুর গ্রামের তাপস বিশ্বাস, জয়দেব বিশ্বাস, প্রকাশ ভৌমিক, বিষ্ণুপদ বিশ্বাস, অচিন্ত্য বিশ্বাসের গরু মারা যায় ।

ফুলবাড়ি পূর্ব পাড়া গ্রামের গরুর খামারী আনোয়ার হোসেন। ১৫ দিনের ব্যবধানে তার খামারের ফিজিয়ান জাতের ৭টি গরু মারা গেছে। তার ক্ষতির পরিমান ১০ লাখ টাকার ছাড়িয়ে যাবে। একই মহল্লার পল্লী পশু চিকিৎসক নিজাম উদ্দিনের ১টি গরু, সাইদুল মন্ডলের ১টি, লথিপ মন্ডলের ১ টি, জব্বার প্রামানিকের ১টি, মিজান মন্ডলের ১টিসহ একই মহল্লায় ১২টি গরু মারা গেছে। এ ছাড়া ঝালুকাদহ গ্রামের আকামদ্দিনের ৩টি গাভী গরু, আছামদ্দিন ওরফে আছাই মিস্ত্রীর ৩টি, লথিপ প্রামানিকের ২টি, ধুসুন্ডা গ্রামের কামাল বিশ্বাসের ১টি, হেলালের ২টি, আতিয়ারের ১টি, রাজু’র ১টিসহ প্রায় শতাধিক গরুর মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

গত সপ্তাহে খোকসা পৌর এলাকার পাতিলডাঙ্গী গ্রামে রাজু আহম্মেদের ১টি, কোরবান আলীর ১টি ও নায়েব আলীর ১টি গরু মারা গেছে।

গরুর মরক মহামারী আকার ধারণ করায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের হাহাকার শুরু হয়েছে। ক্ষুরা রোগের কোন প্রতিশেধক নাই। এ সুযোগে প্রতারক শ্রেণীর কবিরাজরা গরু চিকিৎসার নামে চুটিয়ে ব্যবসা করে নিচ্ছে।

জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী এলাকায় একমাসে ১২ থেকে ১৫টি গরু মারা গেছে। এর মধ্যে ১২-১৩ মন ওজনের গরুও ছিল। এ ওয়ার্ডে মারা যাওয়া গরুর মধ্যে গাভী ও বাছুর গরু বেশী ছিল।
এব্যাপারে খোকসা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার শাহিনা বেগমের কাছে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি