মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করেই পেটে ভাত জোটাতে হয় আখিরন নেছার। জুটলে খান, না জুটলে উপোস থাকেন। সাতক্ষীরা হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াদাহ-ভেড়াখালী গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের মৃত জিয়ারত আলীর স্ত্রী আখিরন নেছার (৪২) জীবন কাটছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে। উপরন্তু পাঁচ বছর ধরে এই অসহায়ের বিধবা ভাতার টাকা তুলে আত্মসাৎ করছেন তারই দেবর।
২৫ বছর আগে উপজেলার হরিশপুর গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী আখিরন নেছার বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ভেড়াখালী গ্রামের আরেক মানসিক প্রতিবন্ধী জিয়ারত হোসেনের সঙ্গে। ৪০ বছর বয়স্ক আখিরন নেছা ১১ বছর আগে তার স্বামীকে হারান। এরপর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। একটি বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে ঘুরে অবশেষে ছয় বছর পূর্বে তার দেবর খলিলুর রহমানের সহযোগিতায় একটি বিধবা ভাতা কার্ড পান। বয়স্ক ভাতাভোগীর তালিকায় নাম থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে পাচ্ছেন না কোনো ভাতা।
আখিরন নেছার মানসিক প্রতিবন্ধিতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ঐ কার্ড নিজের কাছে রেখে গত পাঁচ বছর বছর ধরে ভাতা তুলে নিচ্ছেন তারই দেবর খলিলুর রহমান। খলিলুর রহমান ওই একই গ্রামের মৃত মুনসুর মন্ডলের পুত্র। আখিরন নেছা কার্ড নিতে একাধিকবার খলিলুর রহমানের কাছে গেলে তার নামে কোনো কার্ড হয়নি বলে আখিরন নেছাকে জানান।
সম্প্রতি আখিরন নেছা বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গেলে পাঁচ বছর পূর্বেই তার বিধবা ভাতার কার্ড হয়েছে বলে পরিষদ থেকে জানতে পারেন। এ বিষয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে হাঁসুয়া নিয়ে আখিরন নেছাকে মারতে যান বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
এদিকে এভাবে মিথ্যা বলে গত পাঁচ বছর ধরে খলিলুর রহমান ঐ অসহায় মহিলার বিধবা ভাতার টাকা তুলে আত্মসাৎ করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, আখিরন নেছা ও তার কন্যার ভিক্ষা এবং সাহায্যের টাকাও খলিলুর রহমান কৌশলে নিয়ে নেন।
আখিরন নেছা বলেন, আমি না খেয়ে থাকি, ছেঁড়া শাড়ি পরে থাকি। অথচ আমার কার্ড থাকার পরও ভাতা পাই না। আমার টাকা আরেকজন মেরে খাচ্ছে। এই বিচার কে করবে?
ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টা এলাকার প্রায় সবাই জানে। অসহায় মহিলার সঙ্গে এটা করা খুবই দুঃখজনক। এর যথাযথ বিহীত হওয়া দরকার।
জোড়াদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, আখিরন নেছার মতো অসহায় মানুষের ভাতার কার্ডের টাকা আত্মসাৎ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করব। সামাজিকভাবেও অপরাধীর বিচার হওয়া দরকার।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা ছুটিতে থাকায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।