চিরন বিকাশ দেওয়ান,রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ
ধনপাতা বনবিহারে আজ পঞ্চশীলের মধ্যেদিয়ে সকালে শুভ মধু পূর্নিমা উদযাপন সচনা করা হয় , এই মৈত্রী পবিত্র মধু পূর্নিমা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচ্য সুচীর মধ্যে ছিল
ধনপাতা বনবিহারে,
বুদ্ধ পুজা,সিবলী পুজা,অষ্টপুরস্কার দান,সংঘদান,ভিক্ষু সংঘের পিন্ডু পানীয় দান সহ নানাবিধ দানযোগ্য,
এতে প্রধান স্বধর্ম দেশক ভিক্ষুসংঘের মধ্যেই ছিলেন রাঙামাটি রাজ বনবিহারের আবাসিক ভিক্ষু সংঘ, পরম পুজনীয় শ্রীমৎ বশিষ্ট মহাস্থবির ও শ্রীমৎ পরম পুজ্য অগ্র জ্যোতি মহাস্থবির সহ ১৫ জন গুনি ভিক্ষু সংঘ।
স্বধর্মের আলোয় অনুষ্ঠানটি সাজিয়েছেন ধনপাতা বনবিহারের আজীবন অধক্ষ্য পরম পুজ্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞা বোধি স্থবির, দায়ক দায়িকার পক্ষে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্যা ঝর্না খীসা,রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য শিক্ষা আহবায়ক প্রিয় নন্দ চাকমা, অবসর প্রাপ্ত উপসচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা,রাঙামাটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সুখময় চাকমা,সড়ক জনপদের অবসরপ্রাপ্ত মোহনী রঞ্জন চাকমা,রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সাধন মনি চাকমা, ১১৫ নং মগবান মৌজার হেডম্যান সুজিত দেওয়ান,১১৮ নং ধনপাতা মৌজার হেডম্যান রুপায়ন চাকমা,মগবান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বিনিময় চাকমা, ১নং জীবতলী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার দয়াময় চাকমা, টুনু চাকমা,শান্তি রানী চাকমা,মগবান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সবিনয় চাকমা,গন্যমান্য ব্যক্তি সহ শত শত পূন্যার্থী বৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন।
আড়াই হাজার বছর আগে এই পূর্নিমা তিথিতে মৈত্রী পূণ্যময় মধু পূর্নিমাতে
বানর বুদ্ধকে মধু দান: করেন ঐ সময় এক বানর দীর্ঘদিন ধরে হস্তীরাজের সেবা পর্যবেক্ষণ করে বুদ্ধকে নিজেও সেবা দান করতে সচেষ্ট হলেন। বানরটি একটি মৌচাক এনে বুদ্ধকে দান করলেন। কিন্তু বুদ্ধ তা গ্রহণ করলেও খাচ্ছেন না দেখে বুুঝতে পারলেন সেখানে মধুপোকা ছিল। তিনি আবার বুদ্ধ থেকে সে মৌচাক নিয়ে চাকটিকে পোকা মুক্ত করে দান করলেন। এবার ভগবানকে খেতে দেখে তিনি অতি আনন্দে লাফাতে লাগলেন। এ দানে তার এত প্রীতি উৎপন্ন হয়েছিল যে খুশিতে তিনি এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফাছিলেন কিন্তু হঠাৎ লাফাতে গিয়ে একটি গাছ থেকে পরে মৃত্যু বরণ করেন এবং সাথে সাথে ‘মক্কট দেবতা’ নামে পরিচিত হয়ে স্বর্গে উৎপন্ন হলেন। সহস্র সঙ্গী পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি লাভ করেন তাবত্রিংশ স্বর্গে ত্রিশ যোজন উচ্চ এক স্বর্ণময় প্রাসাদ। মধু পূর্নিমা মূলতঃ তাঁর কারণেই সমাদৃত।।
পালিল্যেয় হস্তীর জ্ঞান:এ হস্তীটি সাধারণ হস্তী ছিল না। এটি ছিল হস্তীরাজ। তাছাড়া এটির বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান প্রখর ছিল। যখন বর্ষাবাস শেষে আনন্দ ভগবানকে আনতে যান তখন বুদ্ধ হস্তীকে জানান যে আনন্দ নামে যে ভিক্ষুটি আসছে তিনি তাঁর শিষ্য। হস্তী তখন আনন্দকে দেখতে পেয়ে উনার কাছ থেকে চীবর ও পাত্র নিতে চাইলেন কিন্তু আনন্দ তা দিলেন না। ঐ সময় হস্তী ভেবেছিল এই ভিক্ষু যদি সত্যি ভগবানের সেবক হন তবে তিনি তাঁর পাত্র চীবর ভগবানের পাত্র চীবরের পাশে রাখবেন না। কারণ গুরুর বিষয়াদির পাশে শিষ্যের বিষয় পাশাপাশি রাখতে নেই! ভগবানের পাত্র চীবর একটি পাথরের উপর ছিল কিন্তু আনন্দ নিজের পাত্র চীবর ভগবানের পাত্র চীবরের নিচে মাটিতেই রাখলেন। সেটি দেখে হস্তীরাজ তুষ্ট হন।
আনন্দ ৫০০শিষ্য নিয়ে সেখানে গমন করেছিলেন। ভগবান সেখানে তাঁদের দেশনা প্রদান করেন। ঐ ৫০০ শিষ্য সেখানেই অরহৎ হন। পালিলেয়্যক হস্তী তাদেঁরও নানা ফল মূল দান করেন। কিন্তু বুদ্ধ বর্ষাবাস শেষে ফিরবার সময় হস্তীরাজ বুদ্ধকে অরণ্যে অবস্থানের জন্য অনুনয় করেন। ভগবান তখন হস্তীরাজকে বলেন যেহেতু এ জীবনে সে ধ্যান, মার্গ কিংবা ফল কোনটাই লাভ করতে পারবে না তাই তাঁর জন্য এতটুকুই পর্যাপ্ত। এই বলে ভগবান তাঁকে মনুষ্য বসতিতে আসতে বারণ করেন। ফিরবার সময় যতটুকু দেখা যায় হস্তরাজ ততটুকু ভগবানের পানে চেয়েছিলেন। পরে আর দেখতে না পেয়ে হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে মারা যান। তিনিও তাবত্রিংশ স্বর্গে উৎপন্ন হন বলে উল্লেখ আছে । তাঁর জন্যও ত্রিশ যোজন উচ্চ প্রসাদ উৎপন্ন হয়। সহস্র সংগী পরিবেষ্টিত হয়ে তিনি সেখানে ‘পালিল্যেয় দেবতা’ নামেই বর্তমানে পরিচিত।
উল্লেখ আছে , অনাগতে যে বুদ্ধগণ উৎপন্ন হবেন সেই আর্যমিত্র, রাম, ধর্মরাজ প্রভৃতির ন্যায় এই হস্তীরাজও বুদ্ধাংকুর।
কারণ- হস্তীরাজ ও বানর অতীত অতীত জন্ম থেকেই বুদ্ধের সাথে অবস্থান করতেন। বিস জাতকে ৪৮৮নং দেখা যায় বুদ্ধ যখন ঋষি ছিলেন তখনও তারা যথাক্রমে হস্তী ও বানরই ছিল। সে জন্মেও তারা বোধিসত্বের নিকটে অবস্থান করতেন, শ্রদ্ধা বন্দনাদি করতেন। বুদ্ধের অন্তিম জন্মেও তারা তাই বুদ্ধের সাক্ষাৎ পান।
তাই সারা পৃথিবীর মত রাঙ্গামাটি রাজ বনবিহার সহ জেলার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রায় ৮০০ টির উপড়ে বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধপূজা, মধুদান অষ্ট পুরস্কার দান সংঘদান ও নানাবিধ দানোষ্টানে,সমবেত প্রার্থনায় সকল প্রাণী সুখি ও মঙল হউক, ধর্ম দেশনার মধ্যেই পবিত্র মধু পূর্নিমা তিথি সমাপ্ত হয়।