মোঃ আজগার আলী, নিজস্ব প্রতিনিধি সাতক্ষীরা: ছয়মাস ধরে নিজের ভিটের নিজের ঘরে স্বাভাবিক ঢুকতে ও বের হতে নাজেহাল হচ্ছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের খাদিজা খাতুন। নিজের ঘরে নিরাপদ নন তিনি।

সামান্য দু’কাঠার কম জায়গায় কু’নজর পড়েছে স্থানীয় ভূমিদস্যু ভাটা মালিক মতি মিয়ার। ভূমিদস্যু মতিয়ার রহমান অরফে ভাটা মতি খাদিজার বাড়ির চারপাশে ইটের স্তুপ করে অবরোধ করে রেখেছে খাদিজার পরিবারকে। টানা ছয় মাস অবুঝ সন্তানদের নিয়ে নিজের ভিটে রক্ষার যুদ্ধে এই অসহায় নারী।

শিশু সন্তানদের নিয়ে ঘুরছেন অফিস, আদালত, আর কোট চত্বরে। আদালত চত্বরে ঘোরাঘুরির পরে অবশেষে নিম্ন আদালত কালিগঞ্জ বেঞ্চ থেকে একুশ জুন তারিখে খাদিজার পক্ষে রায় দেন বাড়ির চারপাশের ইট সরিয়ে অবমুক্ত করার নির্দেশ দেন। খাদিজা তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলো। কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। প্রভাবশালী ভাটা মতিয়ার জেলা জজ আদালত থেকে ২৬শে জুলাই ২৩ ইং তারিখ পর্যন্ত রায় স্থগিত করে।

তারপর থেকে একের পর এক কোর্টের দিন পড়তে থাকে। আজ ১১ই অক্টোবর ২৩ ইং বুধবার আদালতে ধার্য্য দিন আছে। অসহায় খাদিজা তাই চাতকের মতো চেয়ে আছে আদালতের রায়ের দিকে। বিগত এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে খাদিজার বাড়ির চারপাশে ইট ফেলে অবরুদ্ধ করে ভাটা মালিক মতিয়ার। একই দিনে খাদিজা তার ৪ মাসের কন্যাশিশু সহ দুই অবুঝ সন্তানকে নিয়ে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে দেশের মানুষের কাছে আলোচনায় আসে এই অসহায় নারী।

ভিটে রক্ষার আন্দোলনে নিজের সাথে সামিল করেছে শিশু সন্তানদের। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের নজরের আসলে তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে তৎকালীন আরডিসি মোঃ মহিউদ্দিন ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) বাপ্পি দত্ত রনিকে পাঠিয়ে অবরোধ থেকে চলে আসতে বলেন, সেখানেই ঘটনাটি শুনে জেলা প্রশাসক দায়িত্ব দেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। কিন্তু তিনি দ্রুত সমস্যাটির সমাধান না করে কালক্ষেপন করে পরিস্থিতি মতির দিকে ঠেলে দেন।

প্রভাবশালীদের কাছে খাদিজা যেন মূল্যহীন তাইতো সরকারি কর্মকর্তারাও তামাশার পাত্রী ভাবছেন খাদিজাকে এ ক্ষেদোক্তি খাদিজার নিজের। খাদিজা আরো জানান, শিশু সন্তানদের নিয়ে আনন্দের দিনগুলি এখন শুধুই সংগ্রাম আর অজানা আতঙ্কের নাম। সারাদিন থাকতে হয় ঘর বন্দী। বাড়ির চারপাশে প্রভাবশালী ভূমিদস্যূ মতিয়ার ইটের স্তুপ করে অবরোধ করে রেখেছে ছয়টি মাস। সংসারের আয়ের উৎস একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বন্ধ। বাচ্চার মুখে দু-বেলা খাবার তুলে দেওয়ায় কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

খাবার পানি যাওয়ার পথও বন্ধ করেছে নিষ্ঠুর ঐ ভূমিদস্যু। কালিগঞ্জে ভূমিদস্যু মতির যন্ত্রনা শিকার বহু মানুষ কিন্তু খাদিজার মতো এতো যন্ত্রণা আর কেউ ভোগ করছে না। একাধিক সাধারন মানুষের জমি জবরদখল করার অভিযোগ রয়েছে এই ভূমিদস্যু মতিয়ারের বিরুদ্ধে। ক্ষোভে দুঃখে তাই সাধারন মানুষ বলছে আল্লাহ সহ্য করে কিভাবে?

অন্যের জমি জবরদখল করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই ভূমিদস্যূ মতিয়ার। অসহায় মানুষের তবুও যেন পরের সম্পদের লোভ ছাড়তে পারেন না। অত্যাচার সইতে না পেরে, অসহায় হয়ে দেশের মানবাধিকার কর্মীদের দেখতে আহবান জানালেন ভুক্তভোগী খাদিজার স্বামী বুলবুল।

খাদিজার বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্তের সাথে কথা বললে তিনি জানান, খাদিজার বিষয়টি খুবই মানবিক। প্রশাসনে সুদৃষ্টি কামনা করে তিনি বলেন এই ভাবে খাদিজা শিশু সন্তানদের নিয়ে আদালতে হাঁটাহাটি করবে এটা শোভনিয় নয়। দ্রুত এই বিষয়টি সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, সদস্য সচিব এড. মুনিরুদ্দীন বলেন, খাদিজার বিষয়টি খুবই মানবিক। বাংলাদেশের ভূমি আইন অনুযায়ী কারো বসতভিটার রাস্তা বন্ধ করার কোন সুযোগ নেই। নিজের বাড়িতে এভাবে অত্যাচারের স্বীকার হওয়া কোন ভাবেই ঠিক নয়। দ্রুত বিষয়টি নিস্পত্তি করে খাদিজার একটি সুন্দর সুখী জীবনে ফিরিয়ে দেয়া হোক এটায় সুশীল সমাজের প্রত্যাশা।