বিকাশ বাছাড়,মাগুরা প্রতিনিধিঃ

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার আমলসার ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের চাকুরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিন জন নিরিহ গরিব অসহায় মানুষকে গ্রাম পুলিশের চাকুরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৮ লাখ ২১ হাজর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
শ্রীপুর উপজেলার আমলসার ইউনিয়নের বালিয়াঘাটা উত্তর পাড়া গ্রামের অভিরাম মন্ডলের ছেলে সৌরভ মন্ডল গত দেড় বছর আগে আমলার ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের চাকরির নিয়োগে প্রার্থী হলে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ইউপি সদস্য রতন দত্তের যোগসাজসে সৌরভ মন্ডেলের কাছ থেকে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে সৌরভকে দিয়ে বিনা বেতনে দেড় বছর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের ডিউটি করিয়েছেন কিন্তু চাকরি দেননি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানা রকম তালবাহানা করে ঘুরাতে থাকে।
অন্যদিকে একই ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের গোকুল চন্দ্র প্রামাণিকের ছেলে টিকাবিলা বাজারের লেবার ভীম চন্দ্র প্রামাণিকের নিকট হতে গ্রাম পুলিশের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস তার নিকট হতে তিন কিস্তিতে ৯৬,০০০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আজও চাকরি দেননি। টাকাও ফেরত দেন নি। অপরদিকে আমলসার গ্রামের চড়িয়াপাড়ার অনিল বিশ্বাসের ছেলে দিজেন বিশ্বাসের নিকট থেকে ১৬৫,০০০৳ টাকা নিয়েও চাকরি দেন নি এবং টাকাও ফেরত দেননি।
ভুক্তভোগী সৌরভ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা একজন হতদরিদ্র কৃষক। নিজের চাষের জমি লিজ রেখে টাকা যোগাড় করে দেন। গত দেড় বছর আগে আমাকে গ্রাম পুলিশের চাকুরি দেওয়ার কথা বলে মেম্বর রতন দত্তের মাধ্যমে আমার পরিবারের নিকট হতে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন আমলসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস। বিষয়টি এলাকার অনেকেই জানেন।
অন্যদিকে ভীম চন্দ্র প্রামাণিক বলেন,আমি একজন দিনমজুর। টিকারবিলা বাজারে কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি।২০১৬ সালে আমলসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস আমাকে গ্রাম পুলিশের চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে আসে আমি তার সাথে কথা বললে সে আমার কাছে ১,৫০,০০০ টাকা দাবি করে।তাৎক্ষণিক কিছু টাকা নিয়ে যায়।দ্বিতীয় পর্যায়ে আমি জমি বন্ধুক রেখে কিছু টাকা যোগাড় করি হঠাৎ একদিন চেয়ারম্যান আমাকে ফোন দিয়ে বলেন পরিষদে আসো।আমি পরিষদে পৌঁছালে রুমে মধ্যে ডেকে নিয়ে বলে আজকে আমার হাতের অবস্থা খারাপ পরিষদে অনেক খরচ হচ্ছে কিছু টাকা দাও।আমি তখন তার সম্মান রক্ষার্থে কিছু টাকা দিই এবং শেষ কিস্তিতে চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাসের ছেলে সজল বিশ্বাস আমার বাড়ির উপর থেকে দ্রুত চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে যায়। আমি সর্বমোট ৯৬,০০০৳ চেয়ারম্যানকে প্রদান করি।আজও আমার চাকরি হয়নি আবার টাকা চাইতে গিলে নানা বাহানা করে।আমি আমার টাকা ফেরতসহ চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাসের সঠিক বিচার চাই।
অপর ভুক্তভোগী দিজেন বিশ্বাসের ভাই দিলীপ বিশ্বাস জানান, আমার ভাইয়ের চাকরির জন্য এক লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা সেবানন্দ চেয়ারম্যানকে দিয়েছি চাকরিও দেননি টাকা ফেরত দেয় না। আমি সেবানন্দ চেয়ারম্যানের সঠিক বিচার চাই।

এ বিষয়ে সৌরভ মন্ডল আরো বলেন,আমার নিকট হতে টাকা নেওয়ার পর থেকে আমাকে দিয়ে দেড় বছর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত গ্রাম পুলিশের ডিউটি করাইছে, কিন্তুু বিনা বেতনে কাজ করেছি।আমাকে কোনো বেতন প্রদান করা হয়নি। আমাকে চাকুরি না দিয়ে আমার গ্রামের প্রদীপ মন্ডল নামে একজনকে বেশি টাকা নিয়ে চাকুরি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউপি মেম্বার রতন দত্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সৌরভ মন্ডলের কাছ থেকে টাকা আমি নিয়ে চেয়ারম্যান সেবানন্দকে দিয়েছিলাম কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব চাকরি দেননি। পরবর্তীতে কয়েক দফা টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ও এখন পর্যন্ত ফেরত দেননি। সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর টাকা দেয়ার কথা থাকলেও টাকা না দিয়ে নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন।

এ বিষয়ে আমলসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে তিন দিন যাবত বারবার যোগাযোগ করলেও উনি ফোন রিসিভ করেননি বরং ফোন কেটে দিয়েছেন । মুঠো ফোনে খুঁদে বার্তা পাঠিয়েও সর্বশেষ যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।