মো: জুনেদ,জৈন্তাপুর উপজেলা প্রতিনিধি:
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই,নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশে অসংখ্য দরূদ, যার পরে আর কোনো নবী নেই।রাহমাতুললিল আলামিন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি প্রিয় নাম যা প্রত্যেক মুসলিম তার অন্তরে মহব্বতের সঙ্গে স্মরণ করে থাকে।আমলের দিক দিয়ে কারো মধ্যে যত কমতিই থাকুক, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত তার অন্তরে ততই গভীর। এ মহব্বতের কোন তুলনা নেই।মুমিনের দিলে যে কারণে আল্লাহতাআলার মহব্বত গভীর, সে কারণেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত গভীর হওয়া স্বাভাবিক।আল্লাহপাক বলেন, ‘যারা ঈমানদার তাদের মহব্বত গভীর হওয়া স্বাভাবিক’ (সূরা বাকারা: ১৬৫)।আল্লাহপাক আবার বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলে দিন যে যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তা হলে আমার অনুকরণ করো, তা হলে আল্লাহই তোমাদের ভালোবাসবেন। ’এ দু’টি আয়াত থেকে বোঝা গেল যে মুমিন আল্লাহকেই বেশি ভালোবাসেন এবং এ ভালোবাসা প্রকাশের একমাত্র পথ হলো রাসুলের অনুসরণ, অনুকরণ ও আনুগত্য।
কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ছাড়া কি তাঁর আনুগত্য সম্ভব? তাই আল্লাহকে ভালোবাসার স্বাভাবিক পরিণতিই হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা কি পরিমাণ থাকা উচিত সে কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন- ‘তোমাদের কেউ সত্যিকারের মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা, পুত্র ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় বলে গণ্য না হবো। আল্লাহপাক পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজনকে ভালোবাসা কর্তব্য বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কারো প্রতি ভালোবাসা যেন রাসূলের চেয়ে বেশি না হয়, বরং সবার চাইতে যেন রাসূলের প্রতি ভালোবাসা অধিকতর গভীর ও তীব্র হয়, সে কথাই এ হাদিসে বলা হয়েছে।এখন প্রশ্ন হলো যে, আমাদের ভালোবাসা রাসূলের জন্য সবচেয়ে বেশি কি না তা যাচাই করার উপায় কি? এর হিসাব নেয়া কঠিন নয়।
অন্য কোনো মানুষের প্রতি ভালোবাসার দাবি পূরণ করতে গিয়ে যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাফরমানি করা হয় তাহলে বোঝা গেল যে রাসুলের প্রতি ভালোবাসা অন্যের তুলনায় কম। বাস্তবে এটাই দেখা যায় যে মানুষ প্রিয়জনের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তাদের মঙ্গলের নিয়তেই এমন কিছু করে, যা করতে গিয়ে আল্লাহ ও রাসুলের হুকুম অমান্য করে।
রাসুলের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকলে সে এমনটা করবে না। যারা এমন বোকামি করে তাদের সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে অন্য লোকের দুনিয়া বানানোর জন্য নিজের অখিরাত নষ্ট করে, কিয়ামতের দিন সে সবচেয়ে বেশি নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে। ’
রবিউল আউয়াল
মু’মিনের দিলে রাসূলের প্রতি যে মহব্বতের দরিয়া প্রবাহিত হয় তাতে রবিউল আউয়াল মাসে যেন বান ডাকে। মহব্বতের এ জোয়ার এ মাসে সর্বত্রই টের পাওয়া যায়। সিরাতুন নবীর এত চর্চা আর কোন মাসে হয় না। বড় বড় মাহফিলে, মসজিদে, অফিসে, বাড়িতে, সর্বত্র এ মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন হয় এবং তাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম মূল্যবান আলোচনা পেশ করেন।
এসব অনুষ্ঠানে সমবেতভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যে পরিমাণ দরুদ ও সালাম পেশ করা হয় বছরের আর কোনো মাসে এতটা হয় না।এ মাসটি এ ব্যাপারে এমন এক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার কোনো তুলনা নেই। বিশেষ করে ১২ রবিউল আউয়াল ঘরে ঘরে যেভাবে মিলাদের অনুষ্টান করা হয়, এমনভাবে এক দিনে আর কোনো সময় করতে দেখা যায় না।
মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার মাহফিল
মিলাদ অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে একটি বিষয় মুসলিম সমাজ, বিশেষ করে ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন মনে করছি। আমাদের দেশে সারা বছরই বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব দোয়া মাহফিল হয়, তা সাধারণত মিলাদ মাহফিলের নামেই হয়ে থাকে। মৃতের জন্য দোয়া, নতুন বাড়ি বা দোকান উদ্বোধন উপলক্ষে দোয়া, বিয়ে, শাদি উপলক্ষে দোয়ার যে অনুষ্ঠান করা হয়, তা খুবই ভালো রেওয়াজ।তবে মুসলমানদের সব কাজই আল্লাহর নামে ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা অনুযায়ী হওয়া উচিত। মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মদিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন হলো ১২ রবিউল আউয়াল। সে দিনের অনুষ্ঠানকে মিলাদ মাহফিল নাম দেওয়া অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। আরব দেশগুলোতেও এ দিনটিকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করা হয়। বিভিন্ন সময় মাহফিলে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে যে চর্চা হয় তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে অন্য কোনো সময়ের এসব মাহফিলকে ‘মিলাদ মাহফিল’ না বলে দোয়া মাহফিল বলাই যুক্তিসঙ্গত।
১২ রবিউল আউয়ালের গভীর তাৎপর্য,১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিবস হিসেবেই পালন করা হয়। অথচ তিনি এ তারিখে ইন্তেকালও করেছেন। কিন্তু এ দিনটি তাঁর মৃত্যুর দিবস হিসেবে কখনও পালন করা হয় না। সব দেশে ও সব জাতির মধ্যেই মহান ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন করার রীতি চালু আছে। জাতীয় নেতা, স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও বিভিন্ন দিক দিয়ে যারা দেশ বা জাতির জন্য গৌরবময় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য তাদের জন্মদিবস যেমন পালন করা হয়, তেমনি তাদের মৃত্যুদিবসও পালন করা হয়ে থাকে।কিন্তু বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুদিবস কেন পালন করা হয় না? যদি তাঁর জন্ম ও মৃত্যু দিবস একই দিনে না হতো তা হলে হয়ত তাঁর মৃত্যু দিবসও পালন করা হতো। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে হওয়ায় শুধু জন্মদিবস পালন করার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়টির মধ্যে কি কোনো তাৎপর্য নিহিত নেই?