সিলেট প্রতিনিধি:
বিগত ১৬ বছরে সিলেটে যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছে কত জন ভূক্তভোগী তা হিসেব করে গণনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহিলা লীগের দুই নেত্রীর ক্ষমতার ধাপটে অতিষ্ঠ হয়েছেন সিলেটের সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয় ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ, রাজনীতিবিদ ও উঠতি তরুণ যুবকরা। সিলেট জুড়ে ভয়স্কর প্রতারণাকারী নারী হচ্ছেন সিলেট মহানগর যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লাকী আক্তার ওরফে লাকী আহমেদ ও সিলেট সিসিকের ৭নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নাজমা আক্তার নাজু। লাকির গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ আর নাজমার বাড়ি সিলেট জালালাবদ থানার জাহাঙ্গীর নগর এলাকায় তবে সূত্র জানা যায়, নাজমার পূর্ব পুরুষের ঠিকানা হচ্ছে ভারতের করিমগঞ্জে ।
কে সেই লাকি :
ব্ল্যাকমেইলার মক্ষীরাণী লাকি’র ভয়ংকর প্রেমের ফাঁদে দিশেহারা অনেকে। সিলেট জুড়ে লাকি’র নাম শুনলেই অনেকেই গাঁ আঁতকে উঠেন। তার প্রেমের ফাঁদে পড়ে অনেকের জীবন অতিষ্ঠ, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যবসায়ী,চাকুরিজীবি ও সম্মানি ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইলিং কারে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কথিত লাইভার লাকি আহমেদ ওরফে মক্ষীরাণী লাকি আহেমদ। তার সাজানো রয়েছে একটি সাংবাদিক ও সন্ত্রাসী বাহিনী চক্র। এ চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের জোরপূর্বক বাধ্য করে তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। অনেকে সম্মানের ভয়েও এ বিষয়ে পুলিশের সহায়তা নিতে চান না। এসবের প্রতিবাদ করেতে গেলে হতে হয় ধর্ষণ ও সাইবার মামলা শিকার। অন্য দিকে কেউ-কেউ আইনের আশ্রয় নিতে চাইলেও এ চক্রটির মূলহোতা নিজেকে গণমাধ্যমকর্মী ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী পরিচয় দিয়ে থাকে, বিধায় ভুক্তভোগীরা ইচ্ছে থাকলেও পুলিশের ধারস্থ হতে সাহস পান না। একাধিক ভুক্তভোগী তাদের নাম পরিচয় না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য প্রদান করেন। তারা বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন কৌশলে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে কথিত লাইভার লাকি। অনলাইনে উলঙ্গ হয়ে দেহ প্রদর্শন এর মাধ্যমে ভিডিওকলে কথা হয় ঘন্টার পর ঘন্টা, রাতের পর রাত, আর এগুলো ভিডিও ও স্টীল ছবি রেকর্ড করে জিম্মি করেই শত-শত মানুষকে পথে বসিয়ে সর্বস্ব নিঃস্ব করে দেয় বেপরোয়া লাকি। এভাবেই চলছে লাকির জীবনযাপন! এরপর সেখানে পাল্টে যায় তাদের রুপ, নেমে আসে অত্যাচারের মাত্রা। কৌশলে আসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার দর কষাকষি। জিম্মি করা হয় ভূক্তভোগীদের। জনৈক এক সাংবাদিকের ছবি নিয়ে ব্লাকমেইল করা অপরাধে তার বিরুদ্ধে সাইবার আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতারণার মামলা।
বহুরুপি নাজমার আসল পরিচয় :
সিলেট জুড়ে বহুরুপি এক নাম নাজমা,ওই নামের অন্তরালে রয়েছে আরও কয়েকটি নাম, মক্কেলরা কেউ ডাকেন নাজমা আক্তার নাজু, নাজমা খান নাজু, নাজমা খান, আবার কারও কাছে পরিচিত নাজমা খান আরজু, তবে কোনটি তার আসল নাম কেউ সঠিক করে বলতে পারছেন না। তবে দলীয় পদবীতে সবাই নাজমা খান আরজু বলে ডেকে থাকেন। সূত্রে জানা যায়, তিনি সিলেট সিসিকের ৭নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি। সরকার পরিবর্তনের পর ইতিমোধ্যে তার বিরুদ্ধে ৪ আগষ্ট ২৪ইং এর ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলা ঘটনায় একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে সিলেট কতোয়ালী থানায়। ওই মামলায় নাজু ১৯ নং আসামী হিসেবে রয়েছে।
নাজমার পরিচয়ে রয়েছে ভিন্নতা,কখনও তিনি সাংবাদিক,কখনও মহিলা আওয়ামীলীগের নেত্রী আবার নিজেকে কখনও ব্যবসায়ী বলে দাবী করেন।
যুবতী বয়স থেকে নাজমা বাউন্ডলে স্বভাবের ছিলেন, নিজে স্বাধীন ভাবে চলাফেরার কারণে তার পরিবারকে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে অনেক খারাপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে। সূত্র জানায়, পরিবারিক ভাবে নাজমা বিয়ে করলেও সে বিয়ে বেশি দিন টিকেনি। পরবর্তীতে নাজমা অহিদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অহিদ থেকে পরিচয় হেলালের সাথে। এরপর আর থেকে পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। স্যোশাল মিডিয়া ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায় নাজমা খান আরজু ও নাজমা খান নাজু নামের দুটি আইডি রয়েছে। তবে নাজমার ফেসবুক প্রোফাইল চেক করে দেখা যায় সেখানে নাজমা খান নামেও একটি লিফলেট রয়েছে।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রচারের পোস্টারে দেখা যায়, তার নাম নাজমা আক্তার নাজু লেখা রয়েছে। এছাড়াও নাজমার বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ থানায় দায়ের করা একটি মামলা থেকেও তার নাম নাজমা আক্তার নাজু বলে জানা যায়।
সূত্র আরও জানায়, এর আগে নাজুর বিরুদ্ধে স্যোশাল মিডিয়ায় বিস্তর লেখা লেখি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্কের নামে টাকা আত্মসাত ও দেহ ব্যবসার অভিযোগ তুলা হয়েছে। নাজুর কথিত স্বামী অহিদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নারী পাচারের অভিযোগ।
দুই নেত্রীর মদদ দাতা হলেন যারা :
সিলেট যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লাকী বেগম ওরফে লাকী আহমেদ এর বিরুদ্ধে দলীয় ভাবে নানা অপকর্মের মদদ দাতা ছিলেন সিলেট সিসিকের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে লাকীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর নিজেকে সাংবাদিক ও লাইভার হিসেবে জাহির করেন। সেই সময় সাংবাদিক হিসেবে আশ্রয় দেন ফেসবুক পেইজ ৫২ টেলিভিশন এর চেয়ারম্যান রজত চক্রবর্তী তিনি নিজের ফায়দা হাসিলের পর ছুঁড়ে ফেলেন তাকে। পরবর্তীতে লাকি আশ্রয় নেন দৈনিক হাওয়র অঞ্চলের কথা পত্রিকার সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার এর নিকট। তিনি তাকে বেশ কয়েক দিন ভোগ করে তার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার নাজমা আক্তার নাজুর সাথে পরিচয় ও মিল করে দেন এবং দু’জনকে দিয়ে করে থাকেন ব্ল্যাকমেইলিং ও প্রতারণার ফাঁদ। কারও বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা, কারও বিরুদ্ধে ছিনতাই মামলা দিয়ে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আর সহযোগী হিসেবে রয়েছেন দৈনিক বিকেল বার্তার পত্রিকার সম্পাদক ঢাকা মতিঝিল এর ভিক্ষুক কমিটির নেতা সাইফুল ইসলাম, ছিনতাইকারী বিকেল বার্তার সিলেট প্রতিনিধি আব্দুল আলিম রানা ও তালাশ টিভির চেয়ারম্যান প্রতারক কামরুল হাসান জুলহাস। গোলাপগঞ্জের পতিতার সরদার হেলাল আহমদ, মোহনা টিভির সিলেট প্রতিনিধি সিপার আহমদ,দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের সিলেট প্রতিনিধি বিষুদেব নাথ সহ অনেকে।