গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

আলী আহসান মুজাহিদ
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, অনেকেই আশা করেছিলেন যে গণমাধ্যমের ওপর থাকা বিধিনিষেধ কমবে এবং সাংবাদিকরা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও, বাস্তবতা এখনও পুরোপুরি আশাব্যঞ্জক নয়।
পূর্ববর্তী পরিস্থিতি ও পরিবর্তন
গত কয়েক বছরে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ), যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছিল। এই আইনের অধীনে বহু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশ করলেই মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হতো। অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানি, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।
২০২৪ সালের নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নটি নতুন করে আলোচনায় আসে। ইতোমধ্যে ১৬৩ জন সাংবাদিকের সরকারি অ্যাক্রেডিটেশন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাছাড়া, সরকার গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এটি কি বাস্তবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত নাকি শুধুই প্রতীকী উদ্যোগ—সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।চলমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয় যদিও নতুন প্রশাসন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এখনও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানি, তথ্যপ্রাপ্তিতে বাধা এবং নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে সরকারি সংস্থাগুলো থেকে তথ্য পাওয়া, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা—এসব বিষয়ে এখনো তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।
গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারকে আরও স্বচ্ছ নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে সাংবাদিকরা ভয় ও চাপমুক্তভাবে কাজ করতে পারেন। শুধুমাত্র আইনি পরিবর্তন আনলেই চলবে না, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, তথ্যপ্রাপ্তি সহজ করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নীতি গ্রহণ করাও জরুরি।উপসংহার একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন গণমাধ্যমই পারে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপই গণমাধ্যমের সত্যিকারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে। বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়, তাহলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের উচিত সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ, মুক্ত এবং স্বাধীন পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে তারা নির্ভয়ে সত্য তুলে ধরতে পারেন।