সন্দেহে রাঙ্গা ধর্ম (রংপুরি আঞ্চলিক ভাষায়)


মোঃ আহসান কবির রিজওয়ান

সিগারেটের ধোঁয়া কেমনে হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বত রাঙ্গায় দেয়, হেইডার কাহিনী এইডা।

তুফান গেইকাল ঢাকা থেইক্যা গাঁয়ে ফিরছে, লগে আইছে শহরর বন্ধু রাছেল। রাছেলের বাড়ি এই জেলা না, দূর বাড়ি।

গেইগা তারা নদের পাড়ে এক চায়ের দোকানে বসে চা খাইতছিল। হেইডা সময় পাড়ার মানুষ বিষ্ণু দে আইল। বিষ্ণু তুফানর পাশের পাড়ার।

বিষ্ণু তুফানরে দেখেই কইল,
— “ক্যারে ভাই, কবে আইলা?”
তুফান কইল,
— “গেইকাল রাইতে। তুই ক্যামনে আছস?”
বিষ্ণু কইল,
— “এই নদীর পাড়ে ব্লকের কামে আইছি, বিকালে বাড়ি যাইম।”

বিষ্ণু একটা সিগারেট জ্বালাইল, মুখে দিয়া টান মারতাছে, ধোঁয়া ছারতাছে।
তুফান কইল,
— “এই জিনিস খাইস না ভাই, শরীর শুকায় যাইব। তোরে আগেও কইছি।”
বিষ্ণু হেইডার উত্তর না দিয়া কামে রওনা হইল।

চায়ের দোকানে বসলা কয়েকজন মুরুব্বি আর যুবক, তারা গল্প করতাছে—তাজুল নামে এক ছেলেরে নিয়া।
তাজুলরে নিয়া কদিন আগের ঘটনা।
রাইতে সাড়ে দশটার সময় হিন্দু পাড়ার পূজামণ্ডপে কিছু আপেল ঢিল খায়।
দশডা আপেল আছিল।

পুরোহিতরা কইল,
— “এইডা অশুভ লক্ষণ!”

এই সময় তাজুল পূজামণ্ডপর কাছে দিয়া হাঁইটা যাইতেছিল।
ওর গায়ে একটু দ্রুত হাঁটার ভাব।
লোকজন ওরে ডাইকা জিজ্ঞেস করল,
— “ক্যারে, কই যাইতছিলি?”
তাজুল কইল,
— “বাজার থেইক্যা আইতেছিলাম।”
— “কোন কামে?”
— “মা অসুস্থ, ওষুধ আর ফল কিনতে গেছিলাম।”

তাজুলর ব্যাগ চেক কইরা দেখা গেল—হাফ কেজি আপেল!
লোকজন কইল,
— “তোর ব্যাগে আপেল! মানে তুইই ঢিল মারছিস?”
তারে পুলিশে দেয়।

এইটা ত শুধু শুরু।
তিন বছর আগেও হেইরকম ঘটনা ঘটছিল—হাসান নামে এক মুসলমান ছেলেরে ধরা হইছিল পূজার রাইতে।

হাসান ছিল হিন্দু-মুসলিম মিলার পোলা।
সবার লগে হাসি-তামাসা করত।

সন্ধ্যায় অনিক রায় হাসানরে কইল,
— “আমাদের মণ্ডপে আয়, নাড়ু বানানো হইছে, সবাইরে খাওয়াম।”

হাসান গেইগা সময়মতো আইল।
সে হিন্দু বন্ধুদের লগে মিশল, নাড়ু বিলাইতে লাগল।
তবে নাড়ু খাইয়া কিছু লোক হঠাৎ নাচে উঠল।
গান না বাজে, তাও নাচতাছে!
ব্যানারে লেখা—”সবাই আনন্দ করব”।

রাইত সাতটার দিকের ঘটনা—মণ্ডপর পেছনে কয়েকজন জুয়া খেলতাছিল।
একজন গরমে আর জিদে ম্যাচ ফুইটা ছুঁড়ল।
অন্যজন সিগারেট টানার সময় কাশে উঠল।

এই সময় আনসার আইসা সবাইরে তাড়ায় দিল।
জুয়ারীরা মণ্ডপের সামনে আইল।
হাসান আরতি দেখতাছিল, মাঝে মাঝে ফোন ধরত আর এক ধরনের ভেইপ দিয়া ধোঁয়া ছাড়ত।
ভেইপ খাওয়ার অভ্যাস ছিল ওর।

রাইত ১০টা ৪৬ বাজে—ওর ফোনে কল আসে।
হাসান মণ্ডপর পেছনে দাড়াইয়া ফোনে কথা কয় আর ভেইপ টানে।
এই সময় কাপড়র পিছে আগুন লাগে।
ধোঁয়া উড়তাছে।
একটায় আগুন মূর্তির পায়ে যায় গিয়া পৌঁছায়।

হাসানর মুখ থেইকাও ধোঁয়া উড়তাছে।
লোকজন ধরল, গাছে বাইন্ধা রাখল।
পুলিশ আইসা হাসানরে ধরা খাইল্ল।
ওর কাছে ছিল একখান ভেইপ, একখান বাটন ফোন আর ২০০ টাকার নোট।

প্রথম দিন কিছু খাইতে দেয় নাই।
সন্দেহ করল—হাসানই নাড়ুর ভিতরে নেশার ওষুধ দিছে?

তদন্তে দেখা গেল, এক হিন্দু পরিবার ভুল কইরা নারকেলে মিশায়া ফেলছে ওষুধ।
ওই পরিবার নিজেরাও খাইছিল ওই নারকেল।
হাসানর কোনো দোষ প্রমাণ হয় নাই।

সাত মাস জেল খাটার পর ছাড়া পাইল।
তবে হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বে ফাটল ধইরা গেইল।
অনিকের লগে হাসানের সম্পর্ক থাইকা গেলনা।

এইডা থেইক্যা বোঝা যায়—সিগারেটের ধোঁয়া আর সন্দেহ, কেমনে একজনে জীবন রাঙ্গায় দেয়!
হয়তো তাজুলও এইরকম ফাঁদে পড়ত।

শেষ কথা,
“সব মানুষের শত্রু থাকে।
আর যার নাই, সে লড়াই শিখব কেমনে?”