মোঃ মাহ্ফুজুল হক খান (জিকু),সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ

কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের ২৫ দিন পর শহরের নরসুন্দা নদী থেকে ছাত্রলীগ নেতা মুখলেছ উদ্দিন ভূঁইয়ার (২৫) লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেফতারকৃত আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে গুরুদয়াল কলেজ মাঠের সামনে নরসুন্দা নদীর থেকে ছাত্রলীগ নেতা মো. মোখলেছ উদ্দিন ভূঁইয়ার মরদেহ উদ্ধারে ২য় দিন অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। শহরের মুক্তমঞ্চের ওয়াচ টাওয়ারের পূর্ব পাশের ব্রিজের নিচে নরসুন্দায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে তার মরদেহ খুঁজে ১ম দিন পাওয়া না গেলেও আজ ২য় দিন তার বস্থা বন্ধি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।গঠনার অনুসন্ধানে জানা যায়, পাগলা মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ে ফেরার পথে ২৯ মার্চ নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ভাইকে না পেয়ে মিজানুর সদর থানায় ৩১ মার্চ সাধারণ ডায়েরি (নং ১৬৯৮) করেন।মিজানুরের ভাষ্য, তারা নিজ দায়িত্বে এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। মুখলেছ যে বাসায় থাকতেন, এর কাছাকাছি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফুটেজে দেখা গেছে, ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে মুখলেছ হেঁটে বাসায় ফিরছেন। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে হেঁটে আসছে একই গ্রামের যুবক মিজান। অথচ মিজান হারুয়া এলাকায় থাকে না।তাই তাদের সন্দেহ সর্বশেষ অবস্থান রাস্তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে শনাক্ত হয়। ফুটেজে তার সঙ্গে কয়েকজনকে দেখা যায়। ধারণা করছি, তারাই তাকে অপহরণ করে মেরে ফেলেছে।এ ঘটনায় গত ১৬ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা হয়। মামলায় মিজান শেখসহ অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে সিসি টিভির ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ কেওয়ারজুর ইউনিয়ন ফুলপুর গ্রামের শেফুল শেখের তিন ছেলে মিজান শেখ, মারজান শেখ ও রায়হান শেখকে গ্রেপ্তার করে। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন মিজানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মরদেহ উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয় বলে জানা যায়। তবে পৌরসভা কার্যালয়ের পেছনে নরসুন্দা নদীর ফুট ওভারব্রিজের নিচে ২ দিন তল্লাশি চালিয়ে মুখলেছের মরদেহ পাওয়া যায়।কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কেওরাজার ইউনিয়নে মুখলেছ এর গ্রামের বাড়ি বলে জানা যায়। সে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলা বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সে নিজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। এ তথ্য জানিয়ে তাঁর বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, মুখলেছ শহরের হারুয়া বৌবাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং জেলা আদালতের আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শিখছিলেন।

মিজানুর বলেন, কিছুদিন আগে এই যুবকের (মিজান শেখ) গোষ্ঠীর সঙ্গে মুখলেছ গোষ্ঠীর মারামারি হয়। এ ঘটনায় মুখলেছদের করা মামলায় সিসি ফুটেজে দেখা যাওয়া মিজানকেও আসামি করা হয়। এ ধারণা, অনুসরণকারী চিহ্নিত সিসিটিভি ফুটেজে অপহরণে জড়িত।তবে সম্প্রতি মিজান, তার বাবা সেফুল মিয়া, মিজানের ভাই মারজান ও রায়হানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আর পুত্রশোকে মুখলেছের বাবা মকবুল হোসেন স্ট্রোক করেন।মুখলেছের আরেক বড় ভাই আশরাফ আলী বলেন, তাকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনিবার সকালে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে অভিযান চালায়। সেখানে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানের দেওয়া তথ্যেই নরসুন্দা নদীতে মুখলেছের মরদেহের সন্ধান করে পাওয়া যায়।কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার আবুজর গিফারি বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ডুবুরিরা তল্লাশি করে না পেয়ে। আজ আবার উদ্ধার অভিযান চালিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মিজান অপহরণ ও খুনের কথা স্বীকার করেছে। তার তথ্যেই নরসুন্দায় দুইদিন উদ্ধার অভিযান চালিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।