মো.মাহফুজুল হক খান জিকু,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিকপাসপোর্ট অফিস এখন চিহ্নিত অফিস সিন্ডিকেটে পরিচালিত হচ্ছে এমন অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট । ফলে সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহিতরা সার্বক্ষনিক তাকে আতন্কে। অফিস সিন্ডিকেটের আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। আর কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস এলাকায় সকলের মুখে মুখে এখন আশরাফ আলীর নামে চলছে অবৈধ টাকা কামানোর প্রতিযোগিতা। আশরাফ আলীর নতুন নতুন সিন্ডিকেটে জড়িয়ে আছে এ টু জেড বাহীনী সেখানে সমাজকর্মী, রাজনৈতিক নেতা,সংবাদকর্মী,এমনকি স্হানীয় লোকজনসহ সকলের নাম এখন ওপেন সিক্রেট বলে দাবি সকলের । অনেকের দাবী আশরাফ আলী যখন যাকে দরকার তাকে তার প্রয়োজনে ব্যবহার করে নিজে ফায়দা লুটে কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর সেই সিন্ডিকেটের বিষয় গুলো প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি সাংবাদিকের ওপর হামলার পর পরই।বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ও কয়েকজন সংবাদকর্মীর দাবী কিশোর গ্যাং লালন পালন করছেন পাসপোর্ট অফিস সহকারী হিসাব রক্ষক আশরাফ আলী নিজেই।ফলে জীবন আতন্কে এখন অত্র অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সেবা নিতে আসা সকলেই। এই আশরাফ এর হাত থেকে এখন সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি কেউই রেহাই পাচ্ছে না। পান থেকে চুন কসলেই লেলিয়েহ দিচ্ছে এই মাদকসেবী কিংবা কিশোর গ্যাং সদস্যদের। ফলে একচেটিয়া আশরাফ নিয়ন্ত্রণে পাসপোর্ট অফিস। এখানে আশরাফ ছাড়া কারও কর্তৃত্ব চলেনা। সর্বশেষ বিষয়টি পুরোপুরি সত্যতা মিলেছে বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার এস.আই মোঃ রোকনুজ্জামান এর নেতৃত্বে একটি চৌকুষ দল অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট অফিসের ভেতর থেকে কয়েকজনকে আটকের ঘটনা। এতদিন অনিয়মে জড়িতরা যে অফিসটিকে তাদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল ভেবে কুকর্ম ও বিভিন্ন অপরাধসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাসপোর্টের আবেদন ও পোসপোর্ট বই নিতে আসা নিরীহ সাধারণ মানুষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও কাগজপত্র নিয়ে এলাকা থেকে গাঁ ঢাকা দিত সেই অফিস থেকেই তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন অনুসন্ধানী ও সরজমিন পরিদর্শনে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য। অভিযোগ রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের চ্যানেল বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে অফিসের হিসাবরক্ষক মোঃ আশরাফ আলী বিভিন্ন গ্যাং সদস্যদেরকে ব্যবহার করে আসছে। ইতিপূর্বে পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে যেসব সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেছে কিংবা কোন রাজনৈতিক কর্মী পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে আশরাফ আলীর সুবিধা ভোগী বাহীনীর সদস্যদের। পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী ছাড়াও লিখতে গিয়ে কলম ভেঙ্গে যায় এরকম কথিত সাংবাদিকও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের আগে দীর্ঘ ৬ মাস এই এলাকায় কিশোরগঞ্জের কয়েকজন সাংবাদিক এলাকাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ কালে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক ও অন্যান্য কর্মচারীরা বরাবরই তাদের চ্যানেল বাণিজ্যের দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে আসছিল। পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিকদের হাতে প্রমাণ রয়েছে পাসপোর্ট অফিস থেকে কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়মিত মাসোহারা ও কয়েকজনকে সপ্তাহে একটি সম্মানি ভাতা দেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চ্যানেল বাণিজ্যের নামে যদি কিছু নেয়া হয়ে থাকে তবে সেটা এদের জন্য। এছাড়া পাসপোর্ট অফিসের বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু রাখার জন্য যে জ্বালানি খরচের ব্যয়ভার চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে বহন করা হয়। উক্ত অফিসে দীর্ঘদিন যাবৎ রান্না বান্নার কাজে নিয়োজিত একজন গৃহকর্মী কাছ থেকে জানা গেছে প্রতিদিন সকালে অফিসের খরচে সকল কর্মচারীদের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে।অনুসন্ধানকালে সাংবাদিকরা জানতে পারে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্যরা ২০২৩ সনের শেষ দিকে প্রথম হানা দেয়। তাদেরকে নাকি ৮ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে। এই চ্যালেন বাণিজ্যের টাকা উত্তোলনের জন্য অফিস বরকত উল্লাহ নামে একজনকে নিয়োগ দিয়েছিল। সে প্রতি সপ্তাহের বুধবার চ্যানেলের টাকা দোকানদারদের কাছ থেকে উত্তোলন করে অফিসের হিসাবরক্ষক মোঃ আশরাফ আলীর নিকট জমা দিত। সুযোগ বুঝে নিয়োগপ্রাপ্ত বরকত উল্লাও চ্যানেল বাণিজ্যের ১৭ লাখ টাকা নিয়ে গাঁ ঢাকা দেয়। আরও জানা যায় ২০২৪ সালের প্রথম দিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পরিদর্শনে এলে তার পিছনেও নাকি মোটা অংকের টাকা খরচ করা হয়েছে চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা থেকে। এর কিছুদিন পরে কিশোরগঞ্জ দুদুক অফিসের সদস্যরা আবারও কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায়। দুদুকের ২য় অভিযানকে ধামাচাপা দেয়া হয় চ্যানেল বাণিজ্যের টাকা দিয়ে। এসব কারণে কোনদিনই বন্ধ হয়নি পাসপোর্ট অফিসে চ্যানেল বাণিজ্যের নামে গোপনে ঘুষ নেয়ার কৌশল। উল্টো পাসপোর্ট অফিসের লোকজন নিজেদের দোষ বিভিন্ন কৌশলে পুলিশের ডিএসবি শাখার উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা বাঁচার পথ খোঁজে। আর ভূক্তভোগীরা বছরের পর বছর, মাসের পর মাস অত্যাচার নির্যাতন ও সহায় সম্বল হারিয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছু করার নেই তাদের।
উল্লেখ্য যে, কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের হাবিব নামের বই বিতরণকারী নিজেই চ্যানেল শনাক্ত নিয়ে টাকার হিসাব নিকাশ নিয়মিত করে ফলে সপ্তাহে অফিসের টাকা নিয়ে অন্য কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই আশরাফ আলী আর হাবিব মিলিয়ে চলে এ অফিস। অফিসে ক্যাশিয়ারের পদ আশরাফ আলীর থাকলেও কাউন্টারেও বসে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন তিনি।এসব বিষয়ে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কয়েকদিন আগে আশরাফ আলী ও সহকারী পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়াকে অফিসেই শাসিয়েচে কয়েকজন কিন্তু প্রতিবাদ বা আইনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি অফিস কর্তৃপক্ক। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন করতে গিয়েও অফিসের লোকজনের হয়রানির শিকার হয়েছে কিন্তু আবেদনটি জমা নেয়নি এমন অভিযোগও রয়েছে অফিসের অফিসারসহ দায়িত্বশীল।