নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের পাশাপাশি দুইটি গ্রাম নারুই ও ব্রাহ্মণহাতা। ওই গ্রাম দুইটিতে গ্রাম্য আধিপত্য ও গোষ্ঠীগত দ্বন্ডের জের ধরে আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে এলাকাটি। সম্প্রতি গ্রাম্য আধিপত্য ও গোষ্ঠীগত দ্ব›েদ্বর জেরে কিছু মারামারি ঘটনা ঘটে। মামলা মোকদ্দমা হলে গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক থাকে মামলার আসামীরা। এ সব ঘটনাগুলোকে এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর দায় চাপানোর চেষ্ঠা করা হচ্ছে। অত্যাচার নির্যাতন,জমি দখল ও নিপিড়নের অভিযোগ তোলা হয় দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি নারুই গ্রামে সমাজসেক স্পাইডার গ্রæপের চেয়ারম্যান রিপন মুন্সির বিরুদ্ধে। গ্রামের সর্দার মোঃ অলি মুন্সী এ অভিযোগ তুলেন। অলি মুন্সি নিজ স্বার্থে গ্রামে অত্যাচার নির্যাতন ও দাঙ্গা হাঙ্গামা লাগিয়ে রাখে পাল্টা এ অভিযোগ রিপন মুন্সির। এদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক বিরোধ চলে আসছে।
অলি মুন্সীর অভিযোগ বিনা কারণে অন্যায়ভাবে তার অনুপস্থিতিতে শালিশ দরবারের নামে তাকে ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করে রিপন। তার বাহিনী দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ঝাড়– দিঘী নামে তার নিজস্ব একটি আদালত তৈরি করে,সেখানে যে কেই তার কথা বাইরে গেলে শালিশ বিচারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা,জমি দখল ও নানাহ অত্যাচার নিপিড়ন চালায়,তার ভয়ে ইউনিয়ন আ’লীগর সভাপতি আসলাম মৃধাসহ দুই শতাধিক মানুষ পলাতক রয়েছে।
রিপন মুন্সীর দাবী তিনি এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় রেখেছে,শত শত বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থন সৃষ্টি,গরীব অসহায় মানুষদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা, ধর্মীয় স্থাপনা তৈরী, শ্ক্ষিা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাসহ গ্রামটিকে একটি মডেল গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। বিগত ১৫ বছর যাবত গ্রামে ঝগড়া বিবাদ দাঙ্গা হাঙ্গামা নেই। এতে অলির মুন্সীর অন্যায় অনৈতিকভাবে আয় রুজির পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারনেই এসব ভিত্তিহীন প্রভাকান্ডা ছড়াচ্ছে,কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্ঠা করছে।
গতকাল শনিবার(২১/১০)সরজমিন ও এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, নারুই গ্রামের মুতোয়াল্লী বাড়ি গোষ্ঠী ও কাচারী বাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক বিরোধ রয়েছে। গত ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় মুতোয়াল্লী বাড়ি গোষ্ঠীর কুদ্দুস মিয়া ছেলে মুজিবুর রহমানের উপর হামলা চালিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলে হয়। মুজিবুরের চাচাতো বোন আসমা বেগম জানায়, তাদের প্রতিপক্ষ কাচারী বাড়ির গোষ্ঠীর লোকজন গোষ্ঠিগত দ্বন্ধে¦র জেরে এ হামলা চালায়। ওই গোষ্ঠির জালাল,আবুল হোসেন,আশিকল,সুকুর,শাহ আলম মান্নান,জাকির,হামিদ এদের আসমী করে মামলা দায়ের করা হয়। ব্রাহ্মণহাতা গ্রামে ৭টি গোত্র নিয়ে বসকালী বাড়ী নামে আরেক একটি বড় গোষ্ঠি রয়েছে,৭ গোত্রের প্রধান হলেন,মোকারম হোসেন,গনী মিয়া, বাহার মিয়া,জমসেদ মিয়া,খুরশিদ মিয়া,সফি মিয়া ও আরজ মিয়া।
১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোমেন মিয়া জানায়, বসকালী গোষ্ঠীর এক গোত্র প্রধান খোরশেদ মিয়া গোত্রের লোক অলি মুন্সী। গোষ্ঠীগত দ্বব্দে¦ অলি মিয়ার সাথে আমিরুল মিয়ার জমি সংক্রান্ত বিরোধ, মসজিদের রাস্তা কাটা,ও নানাহ্ অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতিসহ ৭টি অপরাধ চিহিৃত করে অলির বিরুদ্ধে একটি শালিস দরবার হয়। শালিস সভায় সভাপতি ছিলেন বসকালী গোষ্ঠীর একটি গোত্র প্রধান সাবেক গ্রাম সভাপতি জমসেদ মিয়া। তাকে ডাকা হলেও সে সভায় উপস্থিত হয়নি। সভায় উপস্থিত সকল গোত্রের প্রধানসহ সাহেব সর্দাররা ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু জরিমানার টাকা আদায় করা হয়নি ।
৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু হানিফ জানায়,এলকায় রিপন এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে,তিনি গ্রামের কোন কিছুতেই জড়িত হয় না,গ্রামের উন্নয়নে সমাজের প্রয়োজনে তাকে ডেকে আনা হয়। উনি জোর পূর্বক কোন জমি দখল করেন নাই,তিনি উচিত মূল্য ও তার চেয়ে বেশী মুল্য দিয়ে জমি কিনেছেন।কোন কোন জমি রদ বদল করেছেন। গোষ্ঠীগত দ্ব›েদ্বর ফলে মুজিবুরের পা ভাঙ্গা ও সম্প্রতি কিছু টুকটাক মারামারি ছাড়া আর কিছু ঘটেনি।
বর্তমান গ্রাম সভাপতি তাজুল ইসলাম জানায়,অলি মুন্সী গ্রামে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে,সম্প্রতি বিছিন্ন কিছু ঘটনা মারামারি হাতাহাতি ঘটনা ঘটিয়ে রিপন মুন্সীর নাম দেওয়া হচ্ছে,গ্রামে কোন বিবাদ নেই,শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করছি। অলির কিছু অপকর্ম ও দুর্নীতির কারনে তার বিরুদ্ধে শালিস হয়েছে, শালিস করেছে গ্রামবাসী।
বসকালী গোষ্ঠীর আরেক গোত্র প্রধান মোবারক হোসেন জানায়,এক গোত্রের প্রধান গনি মিয়ার সাথে অলির মিয়ার রাস্তা সংক্রান্ত বিরোধসহ অলির নানাহ অপকর্ম ও গোষ্ঠীগত দ্ব›দ্ব মিমাংসার জন্য শালিস দরবার হয়েছিল। এটা বসকালী বাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্ব›দ্ব মিমাংসার শালিস দরবার ছিল।
ওই ইউনিয়নের স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়া বলেন, রিপন মুন্সী একজন ভাল মানুষ,পূর্বাঞ্চলে তার মত এরকম ধর্মপ্রান দানবীর মানুষ নেই। তার সামাজিক কাজে গ্রাম উন্নয়নের ফলে কিছু টাউট বাটপার গ্রাম সর্দারের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়।আমার সভাপতি আসলাম মৃধা পলাতক নয়,এটা অলির মিথ্যা অপপ্রচার।
ওই ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আসলাম মৃধা বলেন,আমি ঢাকায় থাকি,গ্রামে মাঝে মধ্যে আসি,রিপন মুন্সীর সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত দ্ব›দ্ব নেই,গ্রামের গোষ্ঠীগত দ্ব›েদ্বর কারনে তার কিছু লোকজন আমার সাথে কিছু দুর্ব্যবহার করেছে। গ্রামে কিছু ঘটনা ঘটেছে মান সম্মানের এখন গ্রামে আসি না।
এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল এমরান বলেন, নারুই গ্রামে মুতোয়াল্লী বাড়ি গোষ্ঠী ও কাচারী বাড়ির গোষ্ঠীর দ্ব›দ্ব অনেকদিনের। সম্প্রতি এদের মধ্যে মারামারি হয়,অলি মুন্সী এর দায় রিপন মুন্সির উপর চাপাচ্ছে। ব্রাহ্মণহাতা গ্রামের বসকালি বাড়ির আভ্যন্তরিন দ্ব›েদ্ব অলি মুন্সীর বিরুদ্ধে একটা শালিশ দরবার হয়েছিল। রিপন মুন্সী এর কোন কিছুতেই জড়িত নন। তিনি গ্রামের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে সুনিদৃষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া যায় না, এই দুই গ্রামে কোন কিছু ঘটলেই রিপন মুন্সির জাড়িয়ে দেয় অলি মুন্সি। যদি রিপন মুন্সীর বিরুদ্ধে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ থাকে সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করুক।
এ ব্যাপারে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলম বলেন, নারুই গ্রামে মুতোয়াল্লী বাড়ি গোষ্ঠী ও কাচারী বাড়ির গোষ্ঠীর একটা মারামারি ঘটনা ঘটে । মামলা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টুকটাক কিছু তর্কাতর্কির হাতাহাতির ঘটনা ছাড়া বড় ধনের কোন ঘটনা ঘটেনি। গ্রাম এখন শান্ত ।