মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরা দেবহাটায় দূর্নীতির মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুতের মিটার লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমান সময়ে বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বৈধ মিটারধারী গ্রাহকরা যেখানে লোডশেডিংয়ে ভুগছে সেখানে অবৈধ পন্থায় দূর্নীতির মাধ্যমে একাধিক শিল্প মিটার লাগিয়ে বৈধ গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এসকল অবৈধ কাজে পল্লী বিদ্যুতের দেবহাটা সাব জোনাল অফিসের এজিএম, দুই একজন লাইনম্যান ও চিহ্নিত দুই একজন দালাল সম্পৃক্ত আছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। যার কারণে লোডশেডিংয়ের পরিমান ফিডার অনুযায়ী বেশি ভোগ করতে হচ্ছে সাধারন গ্রাহকদেরকে। এ ছাড়াও রাইড অব ওয়ে করার নামে প্রতি সপ্তাহে উপজেলার ৭টি ফিডারের কোন না কোন ফিডার বন্ধ করে গ্রাহকদেরকে ভোগান্তিতে ফেলার অভিযোগও আছে এজিএম জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে একাধিকবার এজিএম সভা কমিটির রোষানালে পড়েছেন। অভিযোগ মতে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে মানুষের দৈনন্দিন কাজে বিদ্যুৎ ছাড়া চলা অসম্ভব ব্যাপার। সরকার সেই চাহিদাকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাতক্ষীরা-৩ আসনের এমপি অধ্যাপক ডাঃ রুহুল হক এমপির প্রচেষ্টায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমানের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে দেবহাটা উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতাভুক্ত বলে ঘোষনা দেন। যার কারণে এই এলাকার প্রতিটি গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসে। অনেক অজোপাড়া গায়ের মানুষও বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়। কিন্তু বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে সরকারের সেই সুনাম ও লক্ষ্য অকার্যকর হওয়ার পর্যায়ে পড়েছে। ঐ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা গ্রহন করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পন্থায় শিল্প সেচ মিটার ও শিল্প ঘের মিটার লাগিয়ে বৈধ গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা ও লোডশেডিংয়ের পরিমান বাড়ানো হচ্ছে বলে সূত্র মতে জানা গেছে। সূত্র মতে, দেবহাটা উপজেলার ঈদগাহ বিলের মধ্যে সখিপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কোঁড়া গ্রামের মান্দার তরফদারের ছেলে রজব আলী তরফদারকে ঘেরের শিল্প মিটার প্রদান করা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সেখানে রজব আলীর কোন ঘের না থাকা সত্ত্বেও উৎকোচের বিনিময়ে ঘেরের শিল্প মিটার লাগানো হয়েছে। রজব আলীর ঐ মিটারের নং হলো- ১৭৩৩৮৫৭০। একই ভাবে ঐ মিটারের কিছুটা পাশে পলাশ নামক জনৈক ব্যক্তির সার ও কীটনাশক বিক্রির দোকানের পিছনে কোঁড়া গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের বাহার আলী মন্ডলের ছেলে মফিজুল ইসলামকেও ঘের না থাকা সত্ত্বেও ঘেরের শিল্প মিটার দেয়া হয়েছে। যার মিটার নং- ২১৬৯৪২০। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, দুইজন ব্যক্তি তাদের বসতবাড়ির জন্য আবাসিক মিটারের আবেদন করলে যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে বাড়ির মিটার লাগানোর জন্য খুটি পোতা হলেও ঐ দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তারা সেই খুটি উঠিয়ে নিয়ে মফিজুলের ঘেরের শিল্প মিটার লাগানোর জন্য অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মান্নানের আবাসিক মিটারের সেই খুটি তুলে এনে এখানে লাগানো হয় যেটা সম্পূর্ণভাবে অন্যায়। এতে করে সেই দুইজন গ্রাহক আজও তাদের বসতবাড়িতে মিটার লাগাতে পারিনি। সেই দুইজন ব্যক্তি হলো কোঁড়া গ্রামের ইয়া ডাক্তারের বাড়ির পাশে মৃত শেখ আরশাদ আলীর ছেলে আবদুল মান্নান ও আর একজন হলো কোঁড়া গ্রামের মৃত ছফেদ আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, কাজীমহল্লা গ্রামের মরহুম সৈয়দ আবুল হাসান সউদের ছেলে সৈয়দ হাসান জাহিদ গত ইং ১৭-০৫-২০২১ তারিখে বৈধভাবে একটি শিল্প মিটারের আবেদন করলেও শুধুমাত্র কোন অনৈতিক সুবিধা প্রদান করেননি বলে আজও তার মিটারটির সংযোগ প্রদান করা হয়নি। অথচ কোঁড়া গ্রামের মৃত আবদুল করিম গাজীর ছেলে আবদুল বারী ১৯-০৭-২০২২ ইং তারিখে শিল্প মিটারের আবেদন করলে তার সংযোগটি ইতোমধ্যে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আবদুল বারীর নিজস্ব জমি বা কোন ঘের না থাকা সত্ত্বেও এবং আবদুল বারীর আবেদিত স্থানের ১০০ মিটারের মধ্যে একটি সেচ মিটার থাকার পরেও তিনি কিভাবে সংযোগ পান এ প্রশ্ন সাধারন গ্রাহকদের। হাসান জাহিদের সংযোগ না পাওয়ার বিষয়ে দেবহাটা পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিসের এজিএম জহিরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে গ্রাহক কোন যোগাযোগ করেননি। অন্যদিকে দুইজন গ্রাহকের আবাসিক মিটারের খুটি তুলে অবৈধ শিল্প মিটারের সংযোগ প্রদানের বিষয়ে এজিএম জানান, এ বিষয়ে তার সঠিক জানা নেই এবং আবাসিক মিটারের আবেদনকৃত দুইজন গ্রাহক কোন অভিযোগ প্রদান করেননি। এ ছাড়া আবদুল বারীর মিটারটি যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে বলে এজিএম দাবী করেন। ভুক্তভোগী গ্রাহক আবদুল মান্নান বলেন, তার বাড়িতে আবাসিক মিটার লাগানোর জন্য খুটি লাগানো হলেও দেবহাটা সাব জোনালের এজিএম ও লাইনম্যান ইসমাঈল তড়িঘড়ি করে তার খুটি তুলে পার্শ্ববর্তী ঘেরের শিল্প মিটার লাগানোর জন্য খুটি লাগিয়ে দেয়। তার বাড়িতে মিটার দেয়ার জন্য যে তার লাগানো হয়ছিল সেই তার এখনো লাগানো আছে অথচ বিদ্যুৎ লাইন না পেয়ে তিনি পরিবার নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। মান্নান বলেন, দেবহাটা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসলেও এই কর্মকর্তাদের দূর্নীতির কারণে তিনিসহ কয়েকটি পরিবার অন্ধকারে রয়েছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুতের জিএম বলেন, ঘেরের শিল্প মিটার নিয়ে সেচ মিটার হিসেবে ব্যবহার করা যায়না। তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। এ ছাড়া সেচ মিটার নেয়ার জন্য উপজেলা কমিটির ছাড়পত্র ও যথাযথ নিয়ম মেনে আবেদন করলে তাকে মিটার দেয়া যেতে পারে বলে জিএম জানান।