চিরন বিকাশ দেওয়ান,রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ

আজ ২৮ অক্টোবর ২০২৩ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাস বর্ষাবাস প্রবারনা পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বর্ষাব্রত পালন করেন, অর্থাৎ আসছে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিন এবং সেদিনই তারা প্রবারণা পালন করবেন।  এ উৎসবকে ঘিরে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের চলছে জোড় কদমে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বুদ্ধ পুজা অষ্টপুরস্কার দান সংঘদান পিন্ডি পানিয় দান,সহ নানাবিধ দানযোগ্য অনুষ্ঠান,

রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাজার হাজার পূণ্যার্থী প্রায় বৌদ্ধ বিহারে আজ প্রবারণা পূর্ণিমার আয়োজন চলছে। প্রধান উৎসবকে ঘিরে স্থানীয় বাজারগুলোতে চলছে কেনাকাটার ধূম।  তিন দিন ব্যাপী  পিঠা উৎসব, ফানুস ওড়ানো, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, অতিথি আপ্যায়নসহ বিভিন্ন বর্ণিল আয়োজনে সাজবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান,

প্রবারণার আরেকটি উৎসবময় দিক হচ্ছে ফানুস ওড়ানো, বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে ফানুস ওড়ানোর উদ্দেশ্য হলো আকাশে ভাসমান গৌতম বুদ্ধের পবিত্র কেশ ধাতুকে ফানুস উড়িয়ে প্রদীপ দিয়ে বন্দনা করা।  শাস্ত্রে লেখা আছে সিদ্ধার্থ গৌতম মাথার এক গুচ্ছ চুল কেটে বলেছিলেন তিনি যদি সিদ্ধিলাভের উপযুক্ত হন তাহলে তার কর্তিত চুল যেন নিম্নে পতিত না হয়ে উর্দ্ধে উঠে যায় এবং চুল গুচ্ছ দমকা বাতাসে উড়ে গিয়েছিলো।  তার এই কেশ ধাতু পূজার স্মৃতি স্বরূপ আকাশে ফানুস ওড়ানো হয়।

প্রবারণার বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ নর নারীরা সূচী শুভ্র হয়ে পরিচ্ছন্ন পোশাকে বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হওয়া, বুদ্ধকে পূজা দেয়া, ভিক্ষুদের দান ও আহার্য দেয়া, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ, দুপুরে বিহারে ভাবনা এবং বিকালে আয়োজিত ধর্মসভায় অংশগ্রহণ।  এছাড়াও রয়েছে নবীনদের দ্বারা প্রবীণদের প্রণাম, ছোটদের আশির্বাদ, সমবয়সীরা কোলাকুলি তিন মাস বর্ষাবাস কালে একে অপরের ভূল বষত দোষ করে থাকলে অজ্ঞান বষত কষ্ট দিয়ে থাকে তা ক্ষমা চেয়ে মাপ করে দিয়ে বুদ্ধের অহিংসার বানী পৃথিবীর বুকে সরিয়ে দেওয়া ও সকল প্রাণীর সুখ শান্তি কামনা করে সমবেত প্রার্থনা করা ইত্যাদি; এদিন গৃহীরা ঘরে ভাল ভাল রান্নাও করে থাকেন।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে প্রবারণার গুরুত্ব ও মর্যাদা মহান ও তাৎর্পযমণ্ডতি।  তাই প্রবারণা উদযাপনে বলা হয়, পাপ ও অশুভর্কম থকেে মুক্ত থাকার জন্য এই ব্রতর্কমরে সাধনা।

জীবন গঠনরে ক্ষেত্রে এবং সত্যনিষ্ঠ ধ্যান সমাধির ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই,  তাই শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞাসাধনার পাশাপাশি আত্মসংযম ও ত্যাগশিক্ষা বৌদ্ধ প্রবারণার একটি অপরিহার্য বিধান।  বুদ্ধের জীবদ্দশায় শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে অবস্থানকালে তিনি ভিক্ষুসংঘের পালনীয় কর্তব্য হিসেবে এ প্রবারণার প্রর্বতন করেন। তিন মাস বর্ষাবাস সমাপ্ত ভিক্ষুসংঘ আপন আপন দোষ-ত্রুটি স্বীকারপূর্বক জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুদের কাছে প্রকাশ করে এবং তার প্রায়শ্চিত্র বিধানের আহ্বান জানায়। তেমনি ভাবে জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরাও নবীনদের কাছে তাদের ভুল ভ্রান্তির কথা জানায়। র্অথাৎ, ভিক্ষুরা জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাতসারে যে কোনো অপরাধ করে থাকলে সে অপরাধ স্বীকারর্পূবক প্রবারণা দিবসে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।  কারণ দৈনন্দিন জীবনাচারে চিবত্ত নানা রকম অকুশলে আবষ্টি হয়।  তাই প্রতিটি মুর্হূতে চিত্ত জাগ্রত রেখে গুণের প্রতি আকৃষ্ট থাকার জন্যই এ প্রবারণার প্রবর্তন করা হয়।