মাগুরা প্রতিনিধি: মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার আমলসার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ ও চাউল বিতরণে নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যানের এই ভয়াবহ প্রতারণা ও অনিয়মের অভিযোগ শুনলে যে কারো চোখ কপালে উঠবে। ভিজিডি কার্ড প্রদানে বানিজ্য এবং অনেকের উপকারভোগী হিসাবে কার্ড থাকলেও তাদেরকে কোন চাউল দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে স্কুল- মাদরাসা ও গ্রাম পুলিশে চাকরি দেয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে সেবানন্দ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে । জানা গেছে, আমলসার ইউনিয়নে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত দুস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচি (ভিজিডি)’র আওতায় ৩২৪টি কার্ড বরাদ্দ দেয় শ্রীপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। এ জন্য অনলাইনে আবেদনকারী দুঃস্থ নারীদের মধ্য হতে উপকারভোগী নির্বাচন করার কথা। এদিকে দুঃস্থ নারী নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস স্থানীয় টিকের বিলা বাজারে অবস্থিত ডাচ- বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ৩২৪ জনের কাছ থেকে জন প্রতি ২০০০ টাকা আদায় করেন।

নিয়ম অনুযায়ী দুই হাজার টাকা উপকারভোগীদের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে জমা থাকার কথা অথচ সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোন উপকারভোগীর ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে আদায়কৃত ২০০০ টাকা জমা হয়নি। এ বিষয়ে ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের মালিকের সাথে কথা বললে তিনি জানান,প্রত্যেক উপকার ভোগীদের একাউন্টে ৩০০ টাকা জমা হয়েছে বাকি ১৭০০ টাকার কোন হিসাব নাই আমাদের কাছে নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,বাকি টাকা চেয়ারম্যান- মেম্বারদের যোগসাজশে লোপাট হয়েছে। এদিকে সাংবাদিকদের তথ্য অনুসন্ধানের খবর পেয়ে চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে সকল উপকারভোগীদের ভিজিডি কার্ড ক্লোজ করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে টাকা দিকে উপকারভোগীর তালিকায় নাম থাকলেও চাল পাচ্ছেন না অনেকেই। নিয়ম অনুযায়ী উপকারভোগীর তালিকায় যাদের নাম আছে তারা ৩০ কেজি করে প্রতি মাসে মোট ২৪ মাস চাল পাবেন ।

সেখানে নয় মাস পেরিয়ে গেলেও ১ কেজি চালও পায়নি এমন লোকের সংখ্যা অনেক।অভিযোগ ছিল এরকম লোকের সংখ্যা প্রায় শতাধিক।সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়,আমলসার ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বিকাশ কীর্ত্তুনীয়ার স্ত্রী ঝর্না রানীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভিজিডি কার্ড করে দিলেও উপকারভোগীদের তালিকায় ৩১৩ সিরিয়ালে নাম থাকলেও আজ পর্যন্ত এক কেজি চালও পাননি তিনি ।বারবার ইউনিয়ন পরিষদের যোগাযোগ করলেও তাকে চাল দেয়া হয়নি ।মোবাইলে সমস্যা আছে বলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপর ভুক্তভোগী কচুবাড়িয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী মোছাঃ জামেনা খাতুন এর ৯৫ নম্বর সিরিয়ালে উপকারভোগীদের তালিকায় নাম থাকলেও আজ পর্যন্ত এক কেজি চালও তাকে দেয়া হয়নি। তোমাদের নামে কার্ড হয়নি বলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস। কচুবাড়িয়া গ্রামের মজিদের স্ত্রী মোছাঃ সুফিয়া খাতুন দুই হাজার টাকা দিয়ে ভিজিডি কার্ড করলেও দুই মাসের চাল এখনো পায়নি। ২০০০ টাকা জমা দিয়ে ভিজিড কার্ড করে উপকারভোগী হিসেবে নাম আসলেও চাউল আনতে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাস কার্ডটি রেখে দিয়ে বলে তোমাদের চাল দেওয়া যাবে না তোমরা চলে যাও বলে অভিযোগ করেছে রাজাপুর গ্রামের সুজায়েত মন্ডলের স্ত্রী মোছাঃ শিউলি খাতুন। অপরদিকে রাজাপুর গ্রামের মাহবুব আলমের স্ত্রী শিউলি বেগমের ২৮৮ সিরিয়াল নাম্বারে উপকারভোগীদের হিসাবে নাম থাকলেও এক ছটাক চালও পাননি তিনি।

নাম প্রকাশেরঅনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানায়, সেবানন্দ বিশ্বাস টাকা ছাড়া কোন কাজ করে না। তিনি বলেছেন টাকা না দিলে কেউ কার্ড পাবে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার করে চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদে কোন কাজ করতে আসলেই আগে টাকার প্রয়োজন হয় তার পর কাজ। যারা টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় তাদের কার্ড বাতিলের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন নারী। ফলে কার্ড বাতিলের ভয়ে তারা টাকা দিতে বাধ্য হন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেবানন্দ বিশ্বাস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন আমলসার ইউনিয়ন পরিষদকে। তার ইচ্ছাই সব হয়। তার ইচ্ছার বাইরে কোনো কাজ হয় না। তিনি তার সমর্থক ছাড়া ইউনিয়নের অন্য নাগরিকদের কোন সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সহযোগিতা করেন না। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে আমলসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেবানন্দ বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র মন্ডল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে উপকারভোগীরা ২২০ টাকা করে তাদের ব্যাংক একাউন্টে জমা দিয়ে স্লিপ জমা দিলেই চাল পাওয়ার কথা। প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০০০ টাকা এককালীন নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, উপকারভোগীদের টাকা তাদের ব্যাংক একাউন্টের বাইরে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। আমি নতুন এসেছি চেয়ারম্যান -মেম্বাররা কি করেছে তা বলতে পারব না। আর যারা চাল পাচ্ছেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাকরি সংক্রান্ত কিছু অনিয়মের কথা শুনেছি। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। আর ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরনের অনিয়ম এবং অনেকে চাউল পাচ্ছে না বিষয়টি আমেকে কেউ জানায়নি, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিকাশ বাছাড়,মাগুরা,১০.১০.২৩