চিরন বিকাশ দেওয়ান, রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি কাপ্তাই কৃত্রিম লেক দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ একটি কৃত্রিম জল বিদ্যুৎ রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদে ৪ মাস ১২ দিন বন্ধ থাকার পর আবারো মাছ শিকার শুরু হয়েছে।গত কাল ৩১ আগস্ট মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরুর প্রথম দিনই রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ থেকে বিকাল পর্যন্ত ৬০ মেট্রিক টনের অধিক মাছ আহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফডিসি। বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে মৎস্য ব্যসায়ীদের কর্ম তৎপরতা শুরু হওয়ায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরেছে জেলে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের মাঝে। খুলে দেয়া হয়েছে শহরের সকল বরফ কল। জেলে ও মাছ ব্যসায়ীদের তৎপরতা শুরু হওয়ায় রাঙ্গামাটি শহরের মাছের বাজারগুলোতেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের এক আদেশে গত ২০ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে তিন মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদের সকল প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়।কিন্তু এর মধ্যেও কাপ্তাই হ্রদে কাঙ্খিত পরিমাণ পানি না থাকায় দুই দফায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে প্রশাসন মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা আদেশ তুলে নেয়ায় জেলেরা আবারো মাছ শিকার শুরু করে।
রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া জানান, কাপ্তাই হ্রদে ৪ মাস ১২ দিন মাছ শিকার বন্ধের পর মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় রাঙ্গামাটির বিএফডিসির অবতরণ ঘাটে প্রথম দিনে প্রচুর পরিমাণ মাছ এসেছে এবং এবার সাইজেও বড় আশা করছি এবার মাছের আহরণ ভালো হতে পারে,
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান,রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বিস্তারের জন্যএবার দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল। আশা করছি এবার ভালো পরিমাণ মাছ আহরণ হবে এবংমাছের উৎপাদন আগামী দিনের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। এতে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদে ৬৬টি দেশিও প্রজাতির ও ৬টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। গত বছর রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ১২ হাজার মেট্টিক টনের বেশী মাছ আহরিত হয়। তাই হ্রদে এবার মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ধরে রাখতে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ রক্ষাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে দ্রুত কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ১৯৬০-৬১সালে জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় ২৫৬ বর্গমাইল আয়তনের কৃত্রিম এই কাপ্তাই হ্রদ। পরবর্তীতে এই হ্রদ হয়ে উঠে মিঠাপানির মাছের সবচেয়ে বড় ভান্ডার। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই কৃত্রিম হ্রদে দেশীয় রুই প্রজাতির মাছের বড় একটি অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগান দেয়া হয় কাপ্তাই হ্রদ থেকে, এদিকে এই জল বিদ্যুৎ দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প কারখানা সহ ব্যবসা বানিজ্যিক উৎপাদন মূখী করা সম্ভব হয়েছে।