চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস
মে মাসের প্রথম দিন পালন করা হয় মে দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মে দিবসকে জাতীয় শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটি রাখেন।অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।সবার চিন্তা করা উচিৎ শ্রমিকরা যদি একদিন কার্যদিবসে না যায় তবে পৃথিবী অচল হয়ে পড়বে তাই মাত্র একটি দিনের বেতন হাতে দিয়ে ছুটি দিলে তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দে কাটাতে পারেন কিন্তু মহাজনদের হৃদয়ে এমন চিন্তা কেন জাগ্রত হয় না। খুব কষ্ট লাগে তাদের ব্যবহারে তারা এসিরুমে বসে পা দুলিয়ে কর্মচারীদের কাজ করায়। শ্রমিকদের মানুষ মনে করেনা। মালিকরা রাজার আসনে বসে থাকেন। শ্রমিক তার ঘাম ঝরায় শরীর থেকে।কথায় বলে যে যতো বড় হয় তার মধ্য থেকে মনুষ্যত্ব চলে যায়। তারা টাকার গরমে শরীর গরম করে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ে এ দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
অনেক শ্রমিক জানেনই না এর ইতিহাস। আজ তাদের জন্য এই লেখা উনিশ শতাব্দীর আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানায়। কিন্তু কাজ অনুপাতে পারিশ্রমিক ছিল স্বল্প। যা তাঁদের জীবনধারণের জন্য যথাযথ ছিল না। একটা পর্যায়ে শ্রমিকপক্ষ ক্ষুব্ধ হতে থাকে।যা এক সময় আন্দোলনে রূপ নেয়।এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ১লা মে নির্ধারণ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি। ফলাফলে ১৮৮৬ সালের ৪ঠা মে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে ফের আন্দোলন গড়ে তোলেন শ্রমিকেরা। সেখানে পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করলে নিহত হন ১১জন শ্রমিক।
এ ঘটনার দুই বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। পরে ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের সাড়া হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১লা মে বাধ্যতামূলক কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশের শ্রমিকেরা মে মাসের ১লা তারিখ সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানান। বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ দিনটির তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় মে দিবস। এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য থাকে শ্রমিকদের তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। যাতে করে বাংলাদেশের সবাই মে দিবসের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন ও নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আমরা মে দিবস পালন করি, সেটি কতটা সফল হয়,মে দিবসেও কিছু মানুষ রুটিরুজির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন কাজে। কারণ এক বেলা কাজ না করলে তাঁর পরিবারকে কাটাতে হবে অনাহারে। কারও কারও আবার মেলে না ছুটি।ছুটির দিনে কাজের জন্য জোটে না বাড়তি অর্থও। আট ঘণ্টা কাজের কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়ম চোখে পড়ার মতো। কাজ করতে হচ্ছে আট ঘণ্টার অধিক। দেওয়া হচ্ছে না ওভারটাইম বা অতিরিক্ত সময়ের পয়সা। মে দিবস পালন তো এসব মানুষের কাছে একপ্রকার বিলাসিতাই।আমরা দেখি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কর্মরত। প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানায় আট ঘণ্টার বেশি কাজ হয় প্রতিদিন। ওভারটাইম করতে আগ্রহী না থাকলেও বাধ্য হয়ে তা করতে হয়। সেই ওভারটাইমের টাকাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না বা দিতে নানা ছলচাতুরী করে মালিকপক্ষ। শ্রমিকরা সারাদিন কষ্ট করে
ভর দুপুরে খা খারোদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শক্ত পেশী ছুঁয়ে তপ্ত শরীর হয়ে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম ঝরিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কলকারখানার কাজ করে দেয়।তাদের থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের শিল্পপতিরা। কিন্তু শ্রমিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না।শুধু গার্মেন্ট শিল্প নয়, অধিকাংশ খাতে এমন পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাই।ইপিজেড বা জোনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ, মজুরি পরিশোধ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দেশে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আইন থাকার পরও করোনা মহামারিতে অসংখ্য শ্রমিক হারিয়েছেন তাঁর আয়ের প্রধান উৎস। অফিসে (ফরমাল সেক্টর) চাকরি করেন, এমন ১৩ ভাগ মানুষ মহামারিকালে কাজ হারিয়েছেন। চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই, এমন মানুষের সংখ্যা শেষ নেই।লিখতে গেলে লেখা শেষ হবেনা। তাই মেহনতী মানুষের জন্য শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানেই শেষ করছি ।আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস একজন ছবি প্রেমী মানুষ ছবি আঁকার পাশাপাশি লেখার সাধনা করি। আপনারা সবাই আমার জন্য শুভ কামনা করবেন আমি যেন মৃত্যুর পরেও আমার কর্মের মাঝে বেঁচে থাকতে পারি।সমাজের অবহেলিত মানুষের কর্মকাণ্ড, দুঃখ দুর্দশা চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরি এবং মনের কিছু কথা লেখার চেষ্টা করি।খুলনাতে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি যার নাম খুলনা আর্ট একাডেমি। বাংলাদেশের সকল চারুকলা বিশ্ববিদ্যালয় আমার শিক্ষার্থীরা পড়ছেন ২১৮ জন ।তাদের সকলকে দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করি ।সব সময় অবহেলিত মানুষের কর্মকাণ্ড ,দেশদ্রোহীদের কর্মকান্ড ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে সহযোগিতা করি ।আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে পরিবর্তন করি শুধুমাত্র সরকারের উপরে নির্ভরশীল হলে কখনোই সুন্দর কিছু তৈরি করা সম্ভব না। আপনি নিজে একজন দেশ প্রেমিক হিসেবে ভালো কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দেশের প্রতি ভালোবাসা ঠিক শৈশব থেকে শুরু হয়েছিল।তাই আপনিও দেশকে ভালবাসতে শিখুন। নিজেকে সব সময় নিয়োজিত রাখুন ভালো কাজের সঙ্গে। আপনার প্রতিবেশী অবাঞ্চিত অবহেলিত মানুষের সুখ দুঃখে পাশে দাঁড়ান। অর্থ দিয়ে না পারলেও বুদ্ধি দিয়ে তার সঙ্গে থাকুন। সর্বশেষ আমি বলব আসুন এই পহেলা মে আমরা সবাই এই প্রতিজ্ঞায় দিনটি পালন করি “শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলা গড়তে চাই” মহান মে দিবসের এ প্রতিপাদ্যের আলোকে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের অঙ্গীকার করা উচিৎ। এমন প্রত্যাশায় চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খুলনা আর্ট একাডেমি।